মো. আব্দুলহালিম
বড় ঘরের বড় ছেলে। বড় হয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সময়ে সব সুযোগ এলেও তিনি চাইলেন কৃষক হতে। তিনি আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। বয়স ৪৩।
২০০০ সালে স্নাতকোত্তর হন প্রিন্স। তারপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবি থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ ডিগ্রি নেন ২০০৬ সালে। আরো পরে গেল বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হরিপদ ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে ডক্টরেট হন।
শুরু সেই ছোট্টবেলায়
মাকে লাউগাছ লাগাতে দেখেছিলেন। তখন তিনি স্কুলে পড়তেন। সে দৃশ্য ভোলেননি। তারপর ২০০৬ সালে ভারতের পাঞ্জাবে গিয়েছিলেন একটি প্রশিক্ষণ নিতে। সেখানকার কৃষিব্যবস্থা দেখে আরো আকৃষ্ট হন কৃষিকাজের প্রতি। ২০১৪ সালে শখের বশে নিজের গ্রামে ফলের বাগান করেন। গড়ে তোলেন কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ। এরপর দেশ-বিদেশ থেকে উন্নত ফলগাছের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে বাগানে লাগাতে থাকেন। এখন তাঁর ছয় একর জমিতে ৫৬ প্রজাতির সাত হাজার ফলগাছ আছে। প্রায় সব গাছে ফুল ও ফল ধরেছে।
বাগানটি যেখানে
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামে প্রিন্সের বাগান। দেখতে নয়নাভিরাম। ছোট ছোট গাছে হরেক রকম ফুল ও ফল ধরে রয়েছে। আশপাশের অনেক জায়গা থেকে ফলগাছপ্রেমীরা আসেন বাগানটি দেখতে। মুগ্ধ হন বিষমুক্ত ফলের বাগানটি দেখে। শখের বাগানটি এখন বাণিজ্যিক একটি বাগানে পরিণত হয়েছে। তাঁর ড্রাগন ফলের বাগানটি সবার নজর কাড়ে।
বাগানে আছে
বাগানে ঢোকার মুখেই গাছের নামের তালিকা দেখা যায়। ছোট্ট একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’। ড্রাগন ফল বাগানে তিন প্রজাতির পাঁচ হাজার গাছ আছে। আছে মাহালিশা, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বাউ-৪, কাঁচামিঠা, তাইওয়া গ্রিন, কাটিমন, পালমার, মল্লিকাসহ ১০ প্রজাতির আম, চায়না থ্রি, মঙ্গলবারিসহ তিন প্রজাতের লিচু, মিসরীয় শরিফা, স্ট্রবেরি, চেরি, থাই পেয়ারা, আম, লেবু, জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা, সফেদা, আতাফল, কদবেল, আমলকী, ডেউয়া, ডুমুর, কাঠবাদাম, জামরুল, থাই জাম্বুরা, লটকন, মল্টা ও কলা ইত্যাদি ফলগাছ। দেশি-বিদেশি পাঁচ হাজার ফলগাছের একটি নার্সারি রয়েছে বাগানে।

বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল
প্রিন্সের লক্ষ্য নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফল আবাদ। বাগানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে তিনি নিজের উৎপাদিত কেঁচো সার ও জৈব সার ব্যবহার করেন। ফলগাছে পোকা-মাকড় নিধনে বেশি ব্যবহার করেন বিভিন্ন ধরনের ট্র্যাপ বা ফাঁদ। প্রিন্সের বাগানে সার্বক্ষণিক ৯ জন কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক আছেন আরো পাঁচ-ছয়জন।
মাছের খামার
বাগানের ভেতরে ৫০ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুরে দেশি প্রজাতির মাছের চাষ করেছেন প্রিন্স। পুকুরপারে রাজহাঁস আর চীনা হাঁসের ছোট্ট একটি খামারও আছে। মাছের জন্য বাজার থেকে আলাদা খাদ্য কিনতে হয় না। গত বছর পুকুর থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। পুকুরপারে একটি শেডে কিছু গবাদি পশুও লালন-পালন করছেন। বাণিজ্যিকভাবে গরু পালনের চিন্তাও তাঁর আছে।
প্রিন্সের ভাবনা আমাদের কৃষিজমির সংখ্যা কমছে। অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। এ পরিস্থিতিতে অল্প স্থানে বেশি উৎপাদন করতে না পারলে ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। সেই চিন্তা থেকেই বাগানের কাজে হাত দিয়েছেন প্রিন্স। ফলের বাগান করার আগে প্রশিক্ষণ গ্রহণ জরুরি বলেই মনে করেন প্রিন্স। প্রশিক্ষিত একজন কৃৃৃষক সাধারণ কৃৃষকের চেয়ে অনেক বেশি ফসল ফলাতে পারে। আধুনিক কৃৃষিকাজে মেধাও প্রয়োজন। পরিকল্পিত একটি ফলের বাগান গড়তে সময় লাগে কমপক্ষে সাত থেকে আট বছর। ‘কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ বাগানটির বয়স হয়েছে পাঁচ বছর। এ বাগানটি আরো তিন বছর পর পরিপূর্ণ হবে। তিনি চান দেশে আরো অনেক কৃষি উদ্যোক্তা
Discussion about this post