ব্র্যাক, আশা কিংবা প্রশিকার মতো সংস্থাগুলোর নাম আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। এ এনজিওগুলো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। কাজের ক্ষেত্র বড় আর চ্যালেঞ্জিং হবার কারণে এ খাতে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থাকে অনেকের। কিন্তু এনজিও নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সময়ের ব্যাপার। এ প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে এক নজরে দেখে নিই এবারের লেখায়।
এনজিওগুলোতে চাকরির ধরন কেমন হয়?
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এনজিওগুলোর কাজ করার ক্ষেত্র বিশাল। চাকরির ধরনও আলাদা হয়। যেমন, একটি এনজিও যদি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে, তাহলে স্বাভাবিকভাবে তাদের প্রতিনিয়ত আইনি জটিলতার সমাধান করতে হয়। এ কারণে এসব এনজিওতে আইনজীবীর পদ থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশে এনজিওগুলো সাধারণত যে ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ করে, সেগুলো হলো:
- শিক্ষা ও প্রাথমিক গণশিক্ষা
- বয়স্ক শিক্ষা
- বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ
- স্বাস্থ্য সেবা
- পরিবার পরিকল্পনা
- মা ও শিশুর টিকাদান
- মাদকাসক্তি নিরাময়
- শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা
- নারী উন্নয়ন
- নারী নির্যাতন প্রতিরোধ
- ক্ষুদ্র ঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচন
- গ্রামীণ উন্নয়ন
- নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন
- ত্রাণ ও পুনর্বাসন
- শ্রম ও কর্মসংস্থান
- কৃষি উন্নয়ন
- সামাজিক বনায়ন
- পরিবেশ রক্ষা
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
কাজের ক্ষেত্রগুলোর ভিত্তিতে এনজিওগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের চাকরির সুযোগ। যেমন:
- প্রোগ্রাম/প্রজেক্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট
- ট্রেনিং অ্যাসিস্ট্যান্ট
- ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর
- কমিউনিটি এনগেজমেন্ট অফিসার
কিছু ক্ষেত্রে স্পেশালাইজড পদে নিয়োগ দেয়া হয়। যেমন, স্বাস্থ্য সেবার উপর কাজ করা এনজিওগুলোতে ডাক্তার।
এনজিওর চাকরিতে কোন ধরনের যোগ্যতার দরকার হয়?
শিক্ষাগত যোগ্যতা
এনজিও সেক্টরে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাকরির ধরনের উপর নির্ভর করে। যেমন, মাঠকর্মী হিসাবে কাজ করার জন্য সাধারণত এইচএসসি পাশ হতে হয়। কিন্তু একটু উপরের দিকের চাকরিগুলোতে ন্যূনতম ব্যাচেলরস ডিগ্রি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পড়াশোনার বিষয় সবসময় নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দেয়া থাকে না।
কিছু বিষয়ে ডিগ্রি থাকলে আপনি এনজিওর চাকরিতে প্রাধান্য পেতে পারেন। যেমন:
- ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
- অর্থনীতি
- উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ
- পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ
- সমাজবিজ্ঞান
- অ্যানথ্রোপলজি
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
অভিজ্ঞতা
সাধারণত এন্ট্রি লেভেলের চাকরিগুলোতে খুব বেশি অভিজ্ঞতা প্রয়োজন পড়ে না। তবে অভিজ্ঞতা থাকলে সুবিধা পাবেন। এ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এনজিওগুলোতে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারেন। এছাড়া বহু এনজিওতে রয়েছে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা।
বয়স
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের এনজিওগুলোতে এন্ট্রি লেভেলে যোগদান করার বয়সসীমা ৩২ বছর হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে এ সীমা ৩৫ বছর পর্যন্ত হয়।
বিশেষ শর্ত
কিছু কিছু পদের জন্য রয়েছে কিছু বিশেষ শর্ত। যেমন, পরিবার পরিকল্পনা খাতের কয়েকটি চাকরিতে শুধু মহিলা কর্মীরা নিয়োগ পান। অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ে শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বেশি থাকলে সেগুলোতে পুরুষ কর্মীদের প্রাধান্য দেয়া হয়।
এনজিওর চাকরিতে কোন ধরনের দক্ষতার দরকার হয়?
আপনি যে এনজিও বা পদে চাকরি করতে চান না কেন, কিছু সাধারণ গুণ ও দক্ষতা আপনার কাছে চাওয়া হবে। যেমন:
- মানুষের সমস্যা অনুধাবন করার দক্ষতা;
- আন্তরিকতা;
- ধৈর্যের সাথে কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা;
- মানসিক চাপ সামলানোর দক্ষতা;
- ইতিবাচক মনোভাব থাকা;
- যেকোন পরিস্থিতিতে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেবার ক্ষমতা;
- বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করার দক্ষতা।
উল্লিখিত সাধারণ দক্ষতাগুলো ছাড়াও আপনার কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। যেমন: রিপোর্টিংয়ের কাজ থাকলে আপনাকে মাইক্রোসফট অফিসের ব্যবহার জানতে হবে। আবার আন্তর্জাতিক এনজিওতে কাজ পাবার জন্য ইংরেজি জানা জরুরি। একইভাবে আপনি যদি মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে চান, তাহলে আপনার থাকতে হবে যৌক্তিক ও নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করার দক্ষতা।
এনজিওতে নিয়োগ পরীক্ষার ধরন কেমন হয়?
সাধারণত ঋণদানকারী এনজিওগুলোতে সিভিসহ আবেদন করার পর মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। আবার আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক এনজিওগুলোতে কর্মী নিয়োগের বেলায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকে।
এনজিও নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন?
- পছন্দের খাতে কোন ধরনের চাকরি রয়েছে, তা নিয়ে খোঁজখবর রাখুন।
- যে এনজিওতে কাজ করতে চান, সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
- যে পদের জন্য আবেদন করছেন, সে পদের দায়িত্ব ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা দেখে নিন।
- প্রয়োজনীয় দক্ষতা বা যোগ্যতা না থাকলে তা অর্জনের জন্য চেষ্টা চালান।
- যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ান।
- এনজিওতে ভলান্টিয়ারিং বা ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পেলে গ্রহণ করুন।
- দেশ-বিদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে নিজেকে আপডেটেড রাখুন।
একটা বিষয় মাথায় রাখবেন। এনজিও একটি সেবামূলক সেক্টর। কাজেই এ সেক্টরে সফল ক্যারিয়ার গড়তে মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করার মানসিকতা থাকা আবশ্যক।
Discussion about this post