শিক্ষার আলো ডেস্ক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লিখন আহমেদ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় তার বাসা। করোনাকালীন বিশ্বে যখন স্থবিরতা বিরাজ করছিল ঠিক সেই মুহূর্তে অবসর সময়টাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় ভাবছিলেন তিনি। অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়ে ঘরে বসেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অর্ডার নিয়ে আমের ব্যবসা শুরু করেন।
রাজশাহী ও নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার বাগান থেকে পাইকারি দরে আম কিনে কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতেন লিখন আহমেদ। প্রথমে সেভাবে সাড়া না পেলেও বছর ঘুরতেই ভালো সাড়া পেতে শুরু করেন। ফলে চলতি সিজনে অনলাইনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মতো আম বিক্রি করেন লিখন। এতে তার আয় হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
লিখনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালীন বিশ্ব যখন স্থবির তখন থেকেই বাড়িতে বসে নিজেদের জমিতে সবজি চাষ, মাছ চাষ, কলা উৎপাদনসহ বিভিন্ন রকম কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন তিনি। ঘরে বসে থেকে কিছু করার ইচ্ছা থেকেই অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে খাঁটি মধু, ঘি, ঘানিভাঙা সরিষা তেল, বিভিন্ন রকম খেজুর, মিক্সড ড্রাইফুডসহ ২০-এর বেশি আইটেম নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথমে সেভাবে সাড়া না পেলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভালো সাড়া পেতে থাকেন।
করোনাকালীন পরিবহন জটিলতা ও পাইকারদের অভাবে আমচাষিরা যখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল তখন ইতিবাচক চিন্তা থেকে আম সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেন লিখন। কিছুদিনের মধ্যে ভালো সাড়া পান তিনি।
রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন এ উদ্যোক্তা। বিভিন্ন জাতের আমের মধ্যে রয়েছে গোপালভোগ, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙ্গা, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালি, বারি-৪ ও ফজলি। এসব আমের সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবছর আমের দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি ছিল। ফলে বেশি দাম দিয়ে হলেও অনেকেই রাজশাহীর আম কিনতে অনলাইনে অর্ডার করেন।
এদিকে ব্যবসার পরিচিত বাড়ানোর জন্য ‘পিউর ফুড পয়েন্ট’ নামে একটি পেজ ও ‘নান্দনিক বাজার’ নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলেন লিখন। যেখানে বিভিন্ন প্রোডাক্টের ভিউ দেখানো হয়। ক্রেতারা অনলাইনে প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ অনুযায়ী অনলাইনেই অর্ডার করতে পারেন।
কোচিং ও টিউশন বাদ দিয়ে প্রায় দুমাস অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আমি বিক্রির কাজ শুরু করেন লিখন। দুমাসে তার বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মতো। এতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো আয় হয়েছে তার।
ঢাকা থেকে অনলাইনে লিখনের কাছ থেকে আম অর্ডার করেন আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ। আম হাতে পেয়ে অনলাইনের এমন সেবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে এ উদ্যোক্তার কথা জানতে পেরে তার কাছে অনলাইনে আম অর্ডার করি। তিনি দুদিনের মধ্যে ভালো মানের আম সরবরাহ করে আমাকে কুরিয়ারে পাঠান। আমি আম হাতে পেয়ে তার বিল পরিশোধ করে দেই। ঢাকাতে বসে সহজেই রাজশাহীর সুমিষ্ট আমের স্বাদ ভোগ করতে পেরেছি।’
এ বিষয়ে লিখন আহমেদ বলেন, “আগাম পরিকল্পনা নিয়ে এ সিজনে আমের ব্যবসা শুরু করি। এ বছর সরাসরি বাগান থেকে আম সরবরাহ করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। বিজনেস স্ট্র্যাটেজি ছিল ‘বিক্রি করবো বেশি, লাভ করবো কম’। এটা দারুণ কাজে দিয়েছে। আমার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পরিমাণ আম সারাদেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।”
পড়াশোনার পাশাপাশি এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রতি বছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ গ্র্যাজুয়েট কমপ্লিট করে বের হচ্ছে সে পরিমাণ কর্মসংস্থান বাংলাদেশে নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি লিখনের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।’ সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post