মুহতারিমা রহমান
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিএমই) সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। এই সমঝোতার আওতায় বাংলাদেশ মাদ্রাসা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (বিএমটিটিআই) শিক্ষক এবং দেশজুড়ে বিভিন্ন মাদ্রাসায় কর্মরত ইংরেজি শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে
ব্রিটিশ কাউন্সিল।
মাদ্রাসা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিক্ষাব্যবস্থা। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের (টিএমইডি) অধীনে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এই শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। ইবতিদায়ী (প্রাথমিক), দাখিল (মাধ্যমিক), আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক), ফাজিল এবং কামিল পর্যায়ে মোট ১৩ হাজার টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদান কার্যক্রমের সাথে জড়িত।
এছাড়া, প্রাথমিক শিক্ষা-পরবর্তী (পোস্ট প্রাইমারি) পর্যায়ে প্রায় ২৭ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত মাদ্রাসা শিক্ষা আমাদের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই শিক্ষাব্যবস্থায় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছে এবং প্রধানত ইসলাম ধর্ম ও আরবি ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই) মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিএমই) অধীনে একমাত্র প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার শিক্ষকের পেশাগত উন্নয়নের দায়িত্ব রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। বিএমটিটিআই একটি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। এছাড়া, মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োজিত শিক্ষকদের জন্য
ইংরেজি সহ বিভিন্ন বিষয়-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।
শিক্ষকদের ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ৭২-ঘণ্টার একটি অনলাইন কোর্স (ইংরেজি ভাষা) আছে। এই কোর্সগুলো
বিএমটিটিআই অনুষদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষ সদস্য এবং ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ইংরেজি শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং সাধারণ শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি; বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বিএমটিটিআই) প্রশিক্ষণ কর্মসূচির (পাঠ্যক্রম) উন্নতিকরণ এবং শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ প্রদান করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এই অংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হেলেন সিলভেস্টার বলেন, “এই অংশীদারিত্ব আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। ইন্টারনেটে পাওয়া যায় এমন তথ্যের ৫০ শতাংশেরও বেশি লেখা থাকে ইংরেজিতে; সুতরাং প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য ইংরেজি শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজি শিক্ষা সাফল্যের চাবিকাঠি এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের এ বিষয়ক দক্ষতা রয়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ও শিখনক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ
করছে।”
আরও পড়ুন-বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রেট স্কলারশিপ -২০২৪ আবেদন গ্রহণ শুরু
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, “আমাদের অধীনে প্রায় ৯ হাজার মাদ্রাসা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্য ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মী রয়েছে। কিন্তু তাদের প্রশিক্ষণের জন্য মাত্র ১টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আছে। শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে শিক্ষার্থীদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব না। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একযোগে কাজ করবে।”
অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান; ব্রিটিশ কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক (রিজিওনাল ডিরেক্টর) হেলেন সিলভেস্টার; ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের পরিচালক টম মিশশা; বিএমটিটিআই-এর প্রিন্সিপাল প্রফেসর মাহমুদুল হক এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
Discussion about this post