শিক্ষার আলো ডেস্ক
মধুর ক্যান্টিনের ‘মধুদা’ পেলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি। যিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একজন চা দোকানি, কিন্তু স্বাধীকার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভূমিকায় তার প্রভাব ছিলো।রবিবার (২৪ মার্চ) আরও ১১৮ শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ ধাপে ১১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা দু’এক জায়গায় ব্যতিক্রম করেছি। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুদা, ইনি শিক্ষক, লেখক কিংবা গবেষকও না, শিল্পীও না। উনি এমন একজন ব্যক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই ওনাকে চেনেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক দেশ স্বাধীন সংক্রান্ত যত আন্দোলন হয়েছে, সেখানে ওনার একটা অনন্য ভূমিকা ছিল। ওনার যে অবদান ২৩ বছরে যত নেতাকর্মী দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন, উনি তাদের সহযোগিতা করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ উদাহরণ হচ্ছে মধুদাকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচনা করা। জাতির পিতাই মধুদাকে শহীদ বুদ্ধিজীববী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মধুদা একজন ছাত্রবৎসল মানুষ ছিলেন। তিনি ছাত্রদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করতেন। তাদের লেখাপড়া এবং অন্যান্য বিষয়ে ছিল তার অসামান্য অবদান।
আরো জানানো হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসের বিখ্যাত সব রাজনৈতিক ও সামাজিক—সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিকট মধুদা ছিলেন কিংবদন্তীতুল্য। মধুদা তার ক্যান্টিন ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয় থেকে তার গ্রামের সাধারণ মানুষদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। তিনি এলাকায় সমাজসেবক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাই আলোচনা শেষে শহিদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞার আলোকে মধুসূদন দেকে সমাজসেবী হিসেবে পেশাভুক্ত করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মন্ত্রী আরও বলেন, এ রকম কিছু ব্যক্তি বিশেষ বিবেচনায় গেছে (তালিকায় অন্তর্ভুক্ত)। উনি (মধুদা) সাধারণ একজন চায়ের দোকানদার। তিনি আবার বুদ্ধিজীবী হয় কী করে! কিন্তু উনার যে অবদান, ২৩ বছরে যতো নেতাকর্মী দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন, উনি তাদের সহযোগিতা করেছেন। বিনা পয়সায় চা খাইয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, তালিকা করার ক্ষেত্রে আমরা আর ব্যতিক্রম করিনি। একটাই করেছি, মধুদারটা।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার আগে প্রায় সব ছাত্রনেতাই মধুর ক্যান্টিনে বসে রাজনৈতিক কাজকর্ম চালাতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তান—পর্বে তার রেস্তোরাঁয় অনেক আন্দোলন—সংগ্রামের পরিকল্পনা হয়েছে। এ কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শত্রুতে পরিণত হন তিনি। তা ছাড়া পাকিস্তান আমলে বহু আন্দোলন—সংগ্রামের সূচনাবিন্দু হিসেবে কাজ করেছে এই মধুর ক্যান্টিন। ফলে, পাকিস্তান মিলিটারি ১৯৭১ সালের মার্চে অপারেশন সার্চলাইট নামে যে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তার বলি হন মধুসূদন দে ও তাঁর পরিবার। পাকিস্তানি সেনারা ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের পরদিন সকালে আক্রমণ করে জগন্নাথ হলের পাশের শিববাড়িতে। মধুদা পরিবার—পরিজন নিয়ে শিববাড়ি কোয়ার্টারে থাকতেন। সেনারা সেখান থেকে তাঁকে বের করে নিয়ে এসে গুলি চালায়। স্বামীকে বাঁচাতে এসে স্ত্রীও মারা যান। সেদিন মধুদার পুত্র আর পুত্রবধূও সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুধদাকে জগন্নাথ হল থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং সেই রাতেই হত্যা করা হয়।
Discussion about this post