শিক্ষার আলো ডেস্ক
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট জাল চক্রের দুই জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট এবং অন্যজন তার সহযোগী। পরীক্ষায় ফেল তো দূরে কথা, ইচ্ছেমতো জিপিএ, এমনকি পরীক্ষায় না বসলেও ‘আসল সার্টিফিকেট’ দিতে পারতেন ওই অ্যানালিস্ট।
সোমবার গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মশিউর রহমান এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ, মিরপুর এবং আগারগাঁ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
এসময় দুটি বাসায় তাদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করা হাজার হাজার আসল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, তৈরি করা শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ দলিল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
আটকরা হলেন- বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট এটিএম শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগী ফয়সাল হোসেন।
ডিবির ডেপুটি কমিশনার মশিউর রহমান জানান, শামসুজ্জামানের সরবরাহ করা সার্টিফিকেটগুলো আসল সার্টিফিকেটের মতো। পরীক্ষা দেয়নি এমন লোকের কাছেও তিনি সার্টিফিকেট বিক্রি করতেন। তিনি বোর্ড থেকে সার্টিফিকেটের কাগজ চুরি করে ভাড়া করা ঘরে ওইসব ভুয়া সার্টিফিকেট প্রিন্ট করতেন। পরে তিনি সার্টিফিকেটের বিস্তারিত অনলাইনে আপলোড করে বিক্রি করতেন।
আরও মজার বিষয় হলো, কারিগরি বোর্ডের এসএসসি-এইচএসসির এই সার্টিফিকেটগুলো অনলাইনে যাচাই করতে গেলেও কোনো সমস্যা পাওয়া যেত না। কারণ ওই সার্টিফিকেটগুলোর তথ্য বোর্ডের সার্ভারের ডেটাবেজেও সংযুক্ত করা থাকত। আর এই কাজগুলো করতেন কারিগরি বোর্ডের এক সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান।
তিনি জানান, শামসুজ্জামানের সরবরাহ করা সার্টিফিকেটগুলো আসল সার্টিফিকেটের মতো। পরীক্ষা দেয়নি এমন লোকের কাছেও তিনি সার্টিফিকেট বিক্রি করতেন।
ডিবি জানায়, শামসুজ্জামান বোর্ড থেকে সার্টিফিকেটের কাগজ চুরি করে ভাড়া করা ঘরে ওইসব ভুয়া সার্টিফিকেট প্রিন্ট করতেন। পরে তিনি সার্টিফিকেটের বিস্তারিত অনলাইনে আপলোড করে বিক্রি করতেন।
এ ঘটনায় আর কারা জড়িত তার তদন্ত চলছে বলে ডিবি জানিয়েছে।
গতকাল অভিযানের পর গ্রেপ্তার শামসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আরেক সিস্টেম অ্যানালিস্টের মাধ্যমে সার্টিফিকেট তৈরি করতে শিখেছেন।এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫ হাজার সার্টিফিকেট বা মার্কশিট তৈরি করে বিক্রি করেছেন এবং লাভের টাকা আরও কয়েকজনের সঙ্গে ভাগ করেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, ‘অনলাইনে সার্টিফিকেট আপলোড করতে শামসুজ্জামানের মাত্র ১০ মিনিট সময় লাগত। অসংখ্য অভিযোগ পাওয়ার পর ডিবির এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সার্টিফিকেটের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শামসুজ্জামান তার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে সার্টিফিকেট দেন।’
২০১৭ সালেও মার্কশিট, সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বাহল হয়ে তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট মার্কশিট বিক্রি করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন।
Discussion about this post