মা আর ভাইয়ের গগনবিদারী কান্নায় ভয় পেয়ে মায়ের কোলে আশ্রয় নেয় ২ বছর ৩ মাস বছরের ইয়ানুর। বাবার লাশটা জড়িয়ে মায়ের কান্নার রহস্য সে বুঝতে পারে পারে না, বুঝতে পারে না সে কি হারাল। এতটুকু বয়সে সে বাবাকে হারিয়েও বাবার শূন্যতা বুঝতে পারছে। বড় ভাই ১২ বছরের রবিউল বাবার পায়ের কাছে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। একমাত্র আশ্রয় মা রোজিনা। সুদূর গাইবান্ধা থেকে জীবিকার প্রয়োজনে বাবার সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিসূত্রে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গোহাট্টা গ্রামে ভাড়া থাকেন। এখানে একটি মানুষও তাদের আপনজন নেই।
১৯ এপ্রিল রাত ২টায় করোনাভাইরাসে বাবা আ. আব্দুর রহিমের মৃত্যুর পর ২ মে মা রোজিনা করোনায় আক্রান্ত হয়। ১২ বছর বয়সে ছোট ভাইকে নিয়ে যখন দুর্বিষহ জীবনের হাতছানি ঠিক তখনই ৩ মে সকালে ত্রাতা হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আল মামুন ও স্ত্রী। মা রোজিনা লকডাউনে থাকায় ২ বছর ৩ মাসের ইয়ানুর ও ১২ বছরের রবিউলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তারা। যতদিন মা সুস্থ না হবেন ততদিন তাদের সকল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আল মামুন।
২০ এপ্রিল সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে মৃত রহিমের লাশ দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে গোসল, জানাজার পর দাফন করা হয়। এ অসহায় পরিবারটির পাশে সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন ছাড়া কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি। তাদের ছাড়া রবিউলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জুবলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় তাদের লেখাপড়ার খরচের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
এসিল্যান্ড আল মামুন বলেন, এ পরিবারটি এতটাই অসহায় তাদের গগনবিদারী কান্না চার দেয়ালের বাইরের কেউ শোনেনি। মৃত রহিমের লাশটি পর্যন্ত কেউ দেখতে আসেনি। একটি লাশ নিয়ে স্ত্রী আর ছোট দুটি সন্তান বিভীষিকাময় রাত্রি পার করে যখন সন্তানদের বুকে টেনে নেবেন ঠিক তখনই মায়ের করোনা পজিটিভ। বাড়ি লকডাউন করতে গিয়ে যখন দেখলাম শিশু বাচ্চা দুটিকে দেখভাল করার মতো কেউ নেই তাই মানবিক দায়িত্ব হিসেবে আমি ও আমার স্ত্রী তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। প্রতিটি মানুষ মানুষের বিপদের সময় সহযোগিতার হাত বাড়াবে এটাইতো স্বাভাবিক।
Discussion about this post