অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে প্রলয় সৃষ্টি করেছে আণুবীক্ষণিক জীব নভেল করোনাভাইরাস। গুঁড়িয়ে দিচ্ছে মানবজাতির সভ্যতা ও বিজ্ঞানের দম্ভ। কোন ওষুধ নেই, প্রতিষেধক নেই। শুধুই মৃত্যুর অপেক্ষা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা উঠেপড়ে লেগেছেন একটা ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরিতে। এখনও সফলতার মুখ দেখেননি।
তবে আফ্রিকার দরিদ্র দেশ মাদাগাস্কার দাবি করেছে তারা করোনা নিরাময়ের অলৌকিক ভেষজ ওষুধ তৈরি করে ফেলেছে। ‘আর্টেমিশিয়া’নামে এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ থেকে এই ওষুধ তৈরি করা হয়েছে। এই ভেষজ ওষুধ খেলে ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্তি ঘটবে বলে দাবি দেশটির সরকারের।
তবে আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশটির এই সফলতায় আস্থা রাখতে পারছেন না বিশ্বের অনেকেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তো বলেই দিয়েছে এখনো কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই যা প্রমাণ করে যে আর্টেমিসিয়া কাজ করে। তাই মাদাগাস্কার সরকার করোনভাইরাস নিরাময়ে ভেষজটি সত্যিই কাজ করে কিনা সেটা যাচাই করার জন্য একদল আন্তর্জাতিক গবেষক দ্বারা পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে।
করোনা নিরাময়ে আর্টেমিসিয়া কাজ করে কিনা সেটা পরীক্ষা করতে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ কলয়েডস ও জার্মান পটসডামের ইন্টারফেসের বিজ্ঞানীরা এবং ডেনমার্কের একদল গবেষক মার্কিন সংস্থা আর্টেমিলাইফের সাথে যৌথভাবে কাজ করছেন।
গবেষণার প্রধান পিটার সিবার্গার ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন, ‘এটিই প্রথম সমীক্ষা যেখানে কভিড -১৯ এর সাথে সম্পর্কিত উদ্ভিদ পদার্থের কার্যকারিতা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
সেল স্টাডিতে আর্টেমিসিয়া আনুয়া উদ্ভিদ থেকে পরীক্ষার নির্যাসগুলো নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এটি সুইট ওয়ার্মউড হিসাবে পরিচিত। পাশাপাশি আর্টেমিসিনিনের মতো উদ্ভিদ থেকে বিচ্ছিন্ন ডেরিভেটিভগুলোও পরীক্ষা করে দেখা হবে।
আর্টেমিসিয়া যৌগ দীর্ঘদিন ধরে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে কভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে চিকিৎসার জন্য এটা সত্যিই কতটা কার্যকরি সেটা অনুসন্ধানেই এই গবেষণা চলছে। যদি মাদাগাস্কারের দাবি সত্যি প্রমাণিত হয় তবে এটা হবে কভিড-১৯ চিকিৎসায় এক বড় চমক।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হতে ‘কোভিড-অর্গানিক্স’ নামে এ ‘হারবাল টনিক’ বাজারজাত করার ঘোষণা দেয় মাদাগাস্কার। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ এ ওষুধ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়।ৱ
এরই মধ্যে তানজানিয়ায় ওষুধটি সরবরাহ করেছে মাদাগাস্কার। তানজানিয়া সরকারের মুখপাত্র হাসান আবাস এক টুইটে বলেন, ‘মাদাগাস্কারের কাছ থেকে করোনা ভাইরাসের ওষুধ পেলো তানজানিয়া।’
গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ওষুধটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রেজোলিনা। তিনি বোতল থেকে বাদামি রঙের তরল ওষুধটি পান করে দাবি করেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দুই ব্যক্তি এ ওষুধে সুস্থ হয়েছেন। সাতদিনে এ ‘হারবাল চা’ এর কার্যকারিতা বোঝা যায় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মালাগাসি ফলিত গবেষণা সংস্থা ওষুধি পানীয়টি তৈরি করেছে। পূর্ব আফ্রিকান দ্বীপরাষ্ট্রটি জানায়, প্রতি বোতল ৪০ মার্কিন সেন্ট দরে ওষুধটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
তানজানিয়া ছাড়াও গিনি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, লাইবেরিয়া এবং গিনি বিসাউকে বিনামূল্যে ওষুধটি সরবরাহ করেছে মাদাগাস্কার।
ওষুধটির ১৬ হাজার ডোজ পেয়েছে গিনি বিসাউ, যা তারা আরও ১৪টি আফ্রিকান দেশে বিতরণ করছে। বিতরণের আগে ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন লাইবেরিয়ার তথ্য উপমন্ত্রী ইউজিন ফারগন।
এদিকে অ্যার্টেমিশিয়ার উপাদান ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় কার্যকর এটি স্বীকার করলেও কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি এমন ওষুধ না খেতে সতর্ক করে ডব্লিউএইচও।
সূত্র- ডয়েচে ভেলে।
Discussion about this post