শিক্ষার আলো ডেস্ক
নানা আলোচনার মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত এনসিসিসির বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।
ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন ছাড়াই খসড়াতে তেমন বড় ঝড় পরিবর্তন নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান।
তিনি বলেন, আমরা যেভাবে প্রস্তাব করেছিলাম, আগে যা যা ছিল, সেভাবেই থাকছে। ছোটোখাটো কিছু সংশোধনী সহ মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা হবে নতুন নিয়মে : শিক্ষামন্ত্রী
প্রস্তাবিত কাঠামো এবং নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান মশিউজ্জামান।তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ লিখিত এবং ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক থাকছে।
এর মানে হলো চূড়ান্ত অনুমোদনের ফলে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হচ্ছে ৬৫ শতাংশ। আর কার্যক্রম ভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ ৩৫ শতাংশ। আর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কার্যক্রম বলতে সহজে বললে হাতে-কলমে কাজ।
গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া প্রণয়ন করে এনসিটিবি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও উপস্থাপনের পরে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে নতুন কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়।
সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আবারও সংশোধন করে এনসিটিবির বোর্ড সভায় সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর পাঠানো হয় এনসিসিসির সভায় উপস্থাপনের জন্য।
অনুমোদিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন যেভাবে
নতুন শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয়েছে, যেখানে গ্রেড পয়েন্টের বদলে পারদর্শিতা অনুযায়ী সাতটি স্কেল বা সূচকে মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হবে। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, মূল্যায়নের ক্ষেত্রে লিখিত অংশের ‘ওয়েটেজ’ হবে ৬৫ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ‘ওয়েটেজ’ হবে ৩৫ শতাংশ। শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন মূল্যায়ন ও পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের ফলাফল আলাদাভাবে ফলাফল পত্রে (রিপোর্ট কার্ড) লেখা থাকবে। সবচেয়ে যে ভালো করবে সে ‘অনন্য’ পাবে। এভাবে অন্য পর্যায় দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে।
অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, একটি বিষয়ের মূল্যায়নের সময় থাকবে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা। আমরা এটিকে একটি স্কুল দিবস বলছি, কেননা মানুষ শুনলে এটাকে অনেক সময় মনে করছে। কিন্তু প্রতিদিন বাচ্চারা ৬ ঘণ্টা স্কুলে থাকে। তিনি জানান, যে সাতটি স্কেলে ফলাফল মূল্যায়ন করা হবে, সেগুলোর নাম হবে অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক।
অধ্যাপক মশিউজ্জামান আরও জানান, তাদের মূল্যায়ন কৌশলের খসড়ায় কিছু পরিবর্তন এনে সেটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘প্রারম্ভিক’ সবচেয়ে নিচের স্তরের নাম। তার আগের স্তর হচ্ছে বিকাশমান। একজন শিক্ষার্থী যখন ‘বিকাশমান’ পাবে, তখন তার ২ নম্বর ঘর ভরাট করা থাকবে। কেউ ‘অনুসন্ধানী’ পর্যন্ত গেলে ৩ নম্বর ঘর, এভাবে যে সবচেয়ে ভালো করবে সে পাবে ‘অনন্য’।
শিখনকালীন অর্থাৎ শ্রেণি কার্যক্রমের ওপর ৩৫ শতাংশ মূল্যায়ন করা হবে। বছর শেষে হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। সেখানে পরীক্ষা নেওয়া হবে, যার ওয়েটেজ হবে ৬৫ শতাংশ। শ্রেণি কার্যক্রম বলতে অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপনা, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যা সমাধান ও পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করবে শিক্ষার্থীরা। আর বছর শেষে পাঁচ ঘণ্টার (বিরতিসহ) মূল্যায়নে অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা ব্যক্তিগত, দলভিত্তিক বিভিন্ন কাজে অংশ নেবে। লিখিত অংশের প্রশ্নপত্র হবে শ্রেণি কার্যক্রমের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে।
মূল্যায়ন কাঠামোতে আরও যা থাকছে
এনসিসিসির সভায় অনুমোদিত মূল্যায়ন কাঠামোতে খুব বেশি পরিবর্তন বা সংশোধনী আসছে না। এনসিটিবি যে খসড়া মূল্যায়নের প্রস্তাবনা দিয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগই রাখা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো—এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী দুই বিষয়ে ফেল করলেও তাকে একাদশে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে। তাদের মার্কসশিটও দেওয়া হবে। পরবর্তীসময়ে ওই শিক্ষার্থীকে দুই বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় মূল্যায়ন হবে দুই পদ্ধতিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাদরাসার যে ৯টি বিষয়ের মিল রয়েছে, সেগুলোতে মূল্যায়ন করা হবে নতুন শিক্ষাক্রমে। তবে বিশেষায়িত পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে আগের নিয়মে। একইভাবে কারিগরির এসএসসি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ, দুই ধরনের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে মাদরাসা ও কারিগরির শিক্ষার্থীদের। আগামী দুই বছর এ প্রক্রিয়া চলবে। তারপরে অর্থাৎ, ২০২৮ সাল থেকে সব বিষয়ে নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন করা হবে।
Discussion about this post