শিক্ষার আলো ডেস্ক
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকীর নামে কুষ্টিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিয়েছে সরকার। অনুমোদন পাওয়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ‘জাস্টিস আবু জাফর সিদ্দিকী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’।
এই নিয়ে কুষ্টিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াল তিনটিতে।
গতকাল রোববার (৭ জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ২২টি শর্তে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান নার্গিস আফরোজকে চিঠি দিয়েছেন। অনুমোদিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ঠিকানা হিসেবে দেওয়া হয়েছে লাহানী পাড়া ইউনিয়ন, চাপড়া, উপজেলা কুমারখালী, কুষ্টিয়া।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেওয়া শর্তের মধ্যে রয়েছে- সাময়িক অনুমতির মেয়াদ হবে সাত বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে। এ ছাড়া ন্যূনতম তিনটি অনুষদ ও এসব অনুষদের অধীনে কমপক্ষে ছয়টি বিভাগ থাকতে হবে। পরবর্তীতে কোনো বিভাগ পরিচালনা করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি নিয়ে চালু করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৪ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতির সামারি ফাইলটি অনুমোদন পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয়। সেই প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
যেসব শর্তে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে–
১. সাময়িক অনুমতির মেয়াদ হবে অনুমতি প্রদানের তারিখ থেকে পরবর্তী সাত বছর।
২. প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এ বর্ণিত সব বিধান ও শর্ত মেনে চলবে।
৩. সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত, ১৮৬০ অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্টির রেজিস্ট্রেশন সম্পাদন পূর্বক তা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে।
৪. পাঠদানের নির্মিত প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, অফিস কক্ষ, শিক্ষার্থীদের আলাদা কমন রুম এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কক্ষের জন্য পর্যায় স্থান ও অবকাঠামো থাকতে হবে।
৫. প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যূনতম ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে।
৬. প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম তিনটি অনুষদ ও অনুষদের অধীনে অন্তত ছয়টি বিভাগ থাকতে হবে।
৭. প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, যা ইউজিসি কর্তৃক পূর্বে অনুমোদিত হতে হবে।
৮. প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক বিভাগ, প্রোগ্রাম ও কোর্সের জন্য ইউজিসি কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক পূর্ণকালীন যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৯. প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োজিত শিক্ষক অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত থাকলে তাদের মূল নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ছাড়পত্র ইউজিসিতে জমা দিতে হবে।
১০. প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নির্মিত পাঠক্রম (কারিকুলাম) এবং প্রতিটি বিষয় ও কোর্স প্রণয়নসহ প্রত্যেক বিষয়ে মোট আসন সংখ্যা উল্লেখ করে ইউজিসির অনুমোদন নিতে হবে।
আরো পড়ুন- বিশেষ অনুদানের টাকা পেলেন ১০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী
১১. প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সংরক্ষিত তহবিল হিসেবে ন্যূনতম ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা থাকতে হবে। যা যেকোনো তফসিলি ব্যাংকে জমা থাকতে হবে এবং সরকারের অনুমোদন ব্যতীত তা এবং এর লভ্যাংশ উত্তোলন করা যাবে না।
১২. প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিবেচিত হতে পারে এমন কোনো কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করবে না। এ ছাড়া সন্ত্রাসী বা আশি তৎপরতা বা এ জাতীয় কোনো কার্যকলাপে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোনোভাবেই কোনো পৃষ্ঠপোষকতা দেবে না।
১৩. কেবল ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত অনুষদ, বিভাগ ও কোর্সে ছাত্রছাত্রী ভর্তি এবং ক্যাম্পাস ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
১৪. সরকার ও ইউজিসির অনুমোদন ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে না।
১৫. সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাস সীমিত রাখতে হবে। অন্য কোনো স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা বা কোনো ক্যাম্পাস বা শাখা স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না।
১৬. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ব্যতিরেকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনোরূপ মেডিকেল-ডেন্টাল ফ্যাকাল্টি অথবা চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো কোর্স যেমন– ফিজিওথেরাপি, প্যারা মেডিকেল, মেডিকেল টেকনোলেজি ইত্যাদি পরিচালনা করা যাবে না।
১৭. বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিদেশি নাগরিককে শিক্ষক-বিশেষজ্ঞ হিসেবে কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে হলে এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সরকারি বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
১৮. সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পূর্বানুমোদন ব্যতীত বিদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি বা অ্যাকাডেমিক কোলাবোরেশন করা যাবে না।
১৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ স্ট্যাটিউটস প্রণয়নপূর্বক তা অনুমোদনের লক্ষ্যে যথানিয়মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিকট দাখিল করতে হবে।
২০. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০, সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিদ্যমান ও সময়ে সময়ে জারিতব্য আদেশ-নির্দেশ, নীতিমালা ইত্যাদি যথাযথভাবে অনুসরণ ও প্রতিপালন করতে হবে।
২১. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের তারিখ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ভূমি ও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ীভাবে স্থাপন করতে হবে।
২২. বিশ্ববিদ্যালয় বা এর পক্ষে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, চ্যান্সেলরের পূর্বানুমোদন ব্যতীত, দেশের বাইরের কোনো উৎস হতে কোনো তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে না। অনুরূপ কোনো তহবিল সংগ্রহ করতে হলে সরকারের মাধ্যমে চ্যান্সেলরের নিকট এ সংক্রান্ত অনুমোদন গ্রহণের প্রস্তাব দাখিল করতে হবে।
Discussion about this post