অনলাইন ডেস্ক
অসুস্থ বাবাকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে ১৫ বছরের কিশোরী জয়তি কুমারি পাড়ি দিলেন ১২০০ কিলোমিটার। করোনাভাইরাসরে কারণে লকডাউনে পড়ে ভারতের গুরগাঁও থেকে সাইকেলের পেছনে অসুস্থ বাবাকে বসিয়ে সেউ কিশোরী নিয়ে এলো বিহারে নিজেদের বাড়িতে।
কিশোরী জয়তির এই অসীম সাহসের কাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের মিডিয়ায়। সে সঙ্গে কপালটাও খুলে যাচ্ছে তার। ভারতের কেন্দ্রীয় সাইক্লিং ফেডারেশন আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য তাদের ন্যাশনাল ক্যাম্পে ট্রায়ালের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে অদম্য তারুণ্যের অধিকারী জয়তি কুমারিকে।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপি তৈরি হয়েছে কত-শত গল্প। সে সবের খুব কমই আসে মানুষের কাছে। লকডাউনের কারণে ভারতেরই এক মা ১৪০০ কিলোমিটার স্কুটি চালিয়ে গিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে বিস্ময় তৈরি করেছিলেন। সেই মা না হয় যন্ত্রচালিত স্কুটি চালিয়েছিলেন। কিন্তু কিশোরী জয়তি কুমারি তো নিজের শরীরের শক্তি ব্যয় করে, প্যাডেল চেপে পাড়ি দিয়েছে ১২০০ কিলোমিটার রাস্তা।
লকডাউনের কারণে ভারতের পরিযায়ী (এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কিংবা শহরে যাওয়া) শ্রমিকরা যখন বাড়ি ফিরতে শতশত কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছে, তখন অসুস্থ বাবাকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে কিশোরী জয়তির এত বিশাল পরিমাণ পথ পাড়ি দেয়ার খবর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ভারতজুড়ে।
লকডাউনের কারণে গুরাগাঁওয়ে আকটা পড়েন জয়তি এবং তার বাবা। উপায় না দেখে অদম্য মেয়ে বাবাকে বলে তার পেছনে সাইকেলের ক্যারিয়ারের ওপর বসতে। এরপর টানা সাতদিন সাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়েছেন জয়তি কুমারি। অবশেষে ১২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছান বিহারে নিজ বাড়িতে।
ভারতের সাইক্লিং ফেডারেশনের সভাপতি অঙ্কর সিং পিটিআইকে বলেন, ‘যদি অষ্টম শ্র্রেণির ছাত্রী (জয়তি) কুমারি ট্রায়ালে টিকতে পারে, তাহলে তাকে ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে ন্যাশনাল সাইক্লিং একাডেমির একজন ট্রেইনি হিসেবে নেয়া হবে।’
ন্যাশনাল সাইক্লিং একাডেমি আবার পরিচালিত হয় ভারত সরকারের অধীনে। এশিয়ার মধ্যে সাইক্লিংয়ে এই একাডেমিকেই মনে করা হয় সবচেয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একাডেমি হিসেবে। সাইক্লিংয়ের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউসিআইও (ইউনিয়ন সাইক্লিস্ট ইন্টারন্যাশনাল) এই স্বীকৃতি দিয়ে রেখেছে।
অঙ্কর সিং বলেন, ‘আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বলেছি, আগামী মাসে রাজধানীতে আমাদের যে ন্যাশনাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে তাকে ডাকা হচ্ছে। তবে সরকার যদি লকডাউন তুলে নেয়, তাহলেই অনুষ্ঠিত হবে ক্যাম্পটি। না হয়, লকডাউন পরবর্তী সময়ে যখনই ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হবে, তখনই তাকে ডেকে নেয়া হবে। এসবই হচ্ছে কেবল, সাইকেল চালিয়ে সে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, সে কারণে।’
জয়তি কুমারির ১২০০ কিলোমিটার সাইকেল চালানোর ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরই সাইক্লিং ফেডারেশনের নজরে পড়ে বিষয়টা। অঙ্কন সিং বলেন, ‘জয়তি যদি ট্রেনিংয়ে আসার সময় তার সঙ্গে কাউকে নিয়ে আসতে চায়, তাহলেও সেটা আমরা অনুমতি দেবো।’
Discussion about this post