বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
সরকার সাধারণ ছুটি তুলে নেয়ায় পর গতকাল রবিবার (৩১মে)থেকে সীমিত পরিসরে ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অফিসিয়াল কাজ শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর তাই করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আজ সোমবার (১ জুন) থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর করোনাভাইরাসের কোন নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। আর্থিক কারণে নয়, আমাদের আগে থেকেই কথা ছিল ৩১ মে পর্যন্ত আমরা এটা চালিয়ে যাব। গত ২৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল নয়। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সময় দিতে হবে। ল্যাবের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি আমাদের বিভিন্ন বিভাগ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলো এখন সেখানে গবেষণার কাজে প্রয়োজন হচ্ছে। সেগুলো জীবাণুমুক্ত করে আবার সেখানে স্থাপন করতে হবে। মূলত এজন্য করোনার নমুনা পরীক্ষার কাজটা আর হচ্ছে না।’
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অসহযোগিতা এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবসহ মৌলিক চারটি কারণে ল্যাব বন্ধ হচ্ছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড.শরীফ আখতারুজ্জামান।
তিনি জানান, চারটি মৌলিক কারণে আমরা আমাদের করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছি না। প্রথমত, যারা আমাদের এই করোনা পরীক্ষার ল্যাবে কাজ করে তারা স্পেশালিস্ট না। তারা তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তাদের কোন মেডিকেল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। যে কারণে তারাও কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন।
দ্বিতীয়ত, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। আর বিশ্ববিদ্যালয় তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটা কোন মেডিকেল নয়। যার কারণে আলাদা কোন বাজেট নেই। প্রতিমাসে ১৫-২০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। তাই এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভর্তুকি দিয়ে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
তৃতীয়ত, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা কাজ করছে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে, গবেষণা করে। হয়ত অল্প কয়েকদিন পর সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খোলা হচ্ছে। তারা তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে চলে যাবেন। যারা কাজ করছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন ধরনের আর্থিক সহায়তা, লজিস্টিক সাপোর্ট পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্য প্যাকেজের অধীনেও রাখা হয়নি।
চতুর্থত, লজিস্টিক সাপোর্ট, বিভিন্ন অনুষদ এবং বিভাগের ইকুয়েপমেন্ট, যন্ত্রপাতি নিয়ে উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে এটি স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন বিভাগের যন্ত্রপাতিগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কারণ, তাদের গবেষণার বিষয় রয়েছে। তাদের বিভাগের ভ্যন্তরীণ বিষয় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে বলতে গেলে সীমাবদ্ধতা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা না থাকায় আমাদের পক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য করোনা পরীক্ষা করার ল্যাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’
তবে উপাচার্য বলছেন, অর্থিক সংকট রয়েছে ঠিকই, তবে সেটা মূখ্য বিষয় নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাপ্তরিক কাজ শুরু হয়েছে তাই আমরা নমুনা পরীক্ষা আর করছি না।’
অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ল্যাবের মেশিনগুলো মাইক্রোবায়োলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ থেকে আনা হয়েছিল। এগুলোর নিয়মিত যে গবেষণা কার্যক্রম আছে সেই গবেষণা কর্মে ফিরে যাবে।’
উল্লেখ্য, গত ৫ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (কারাস) ভবনে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য তৈরি ল্যাবের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তখন থেকে এ ল্যাবে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করা হতো।
Discussion about this post