নিউজ ডেস্ক
করোনার ঝুঁকি এড়াতে এক-চতুর্থাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি অফিসে, ২৫ শতাংশ বাসা থেকে অনলাইনে কাজ করছেন। বাকি ৫০ শতাংশ রিজার্ভ রাখা হচ্ছে, তারা পরবর্তী ধাপে কাজ করবেন। করোনার ঝুঁকি এড়াতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে এ কৌশল নিয়ে চলছে সরকারি অফিস।
আর করোনা সংক্রমিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা তথা ‘রেড জোন’ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে না আসতে নিষেধ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বুধবার (৩ জুন) মোবাইলে ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, অফিসে বলেছি- ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসবেন না। ওই সবস্থান থেকে বের হলে আক্রান্ত হবেন। বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে আমরা কাজ করছি।
৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে ৩১ মে থেকে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিছু বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস খুলেছে। তবে অফিস খুললেও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে একসঙ্গে সবাইকে অফিস নিচ্ছে না সরকার। ২৫ শতাংশ অফিসে, ২৫ শতাংশ বাসা থেকে অনলাইন ও মোবাইলে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন। বাকি ৫০ শতাংশ রিজার্ভ রাখা হয়েছে। কারণ, এরই মধ্যে জনপ্রশাসনের প্রায় শ’খানিক আক্রান্ত হয়েছেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, আমাদের কোনো কাজ পেন্ডিং নেই। একি সঙ্গে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অফিসে আসবেন। যাতে বেশি না বের হয়। তারা অনলাইন-টেলিফোনে যুক্ত থাকেন। এভাবে কাজ চালিয়ে নেবো। কোনো কজ যাতে ব্যাহত না হয় এবং ইনফেকটেড না হয়।
‘আমাদের আরেক সেট (৫০ শতাংশ) রিজার্ভ থাকবে। বলা যায় না, আপদকালীন প্রয়োজন হতে পারে।’
সচিবালয়ে অনেক ডিসিপ্লিনের মধ্য দিয়ে কাজ চলছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিসিপ্লিনগুলো অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। অর্থনীতি ঠিক রাখতে হবে, কাজও করতে হবে। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম করেছে সেগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহার করে কাজ করছি। সব কাজ চলছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপাতত ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরকে আমরা রেড জোন বলছি। আবার ঢাকারও পুরোটা রেড জোন হয়তো হবে না। এখানে সংক্রমণের হার কম-বেশি রয়েছে। রেড জোনকেও ছোট ছোট এলাকায় ভাগ করা হবে। তা নাহলে কার্যক্রম থমকে যাবে।
করোনার রেড জোন থেকে যাতে অফিস না করে সেজন্য কর্মকর্তাদের অনলাইনে যুক্ত হয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ম্যাপিং করা হচ্ছে। রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোন থাকবে। সেখানে প্রতিদিনকার ডাটা থাকবে।
‘অফিসে বলেছি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসবেন না। বের হলে আক্রান্ত হবেন। সতর্কতার সঙ্গে করছি,’ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে বলে জানান ফরহাদ হোসেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, কোথায় কতজন আক্রান্ত আছে সেটা ম্যাপিং করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ একটি ম্যাপ জমা দিয়েছে। প্রতিদিন পরিস্থিতির সঙ্গে ম্যাপও পরিবর্তন হবে। আক্রান্ত পরিস্থিতি অনুযায়ী ম্যাপের বিভিন্ন এলাকা রেড, ইয়োলো ও গ্রিন হবে। সফটওয়্যারটা রেডি। এ সিদ্ধান্ত দুই-তিন দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়ে যাবে।
৩১ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস চালুর বিষয়ে জনপ্রশাসনের নির্দেশনায় বলা হয়, সব সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
আর ছুটি বাড়তে পারে কিনা এমন প্রশ্নে ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা ১৫ দিনের জন্য দিয়েছি। আজ চতুর্থ দিন। আরও কয়েকদিন দেখে সিদ্ধান্ত হবে। ‘তবে আমাদের এভাবে কনটিনিউ করতে হবে। পরিবেশ বুঝে বের হতে হবে। বাসের অভিযোগগুলোও আমরা দেখছি। যাতে সবাই বোঝে যে অনিরাদভাবে বের হলে পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। তারা যাতে নিজেকে সেইভ রেখে কাজ করেন।’
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অফিস সময় শিথিলও করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (২ জুন) এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় জানিয়েছে, সকাল বেলায় অফিসে এসে কোনো কর্মকর্তা যদি দুইঘণ্টায় কাজ শেষ করতে পারেন, তাহলে কাজ শেষেই তিনি চলে যেতে পারবেন। বিকেল ৫টায় অফিস ছুটির জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে না। কেউ অফিস থেকে চলে গেলে ওই দপ্তরে তার জায়গায় অন্য কেউ অফিসে আসতে পারবেন।
এছাড়া করোনাকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় কুইক রেসপন্স টিম গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ টিম জনপ্রশাসনের যেকোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হলে তার বা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনী ওষুধ, চিকিৎসাসহ সব বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করবে।
Discussion about this post