নিউজ ডেস্ক
করোনারভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এবার কার্যকর লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। মঙ্গলবার(৯জুন) রাত ১২টা থেকে রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউনের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
সারাদেশকে তিনটি জোনে (রেড, ইয়লো ও গ্রিন) ভাগ করে এই লকডাউন প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান বলেন, মেয়র আতিকুল ইসলাম সোমবার (৮জুন)দুপুরে আমাদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে মেয়রের কাছে আজই এই নির্দেশনা এসেছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করা হবে। এখানে ১৬ হাজার ভোটার আছে। তবে মোট জনসংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। এখানে কোন অফিস নেই। পুরোটাই আবাসিক। আমরা পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। যাদের ঘরে খাবার নেই তাদের খাবারও পৌঁছে দেওয়া হবে। আর যারা টাকা দেবেন তাদের বাজার করে পৌঁছে দেওয়া হবে। এমনকি চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষনিক এ্যাম্বুলেন্স থাকবে। আর কেউ মারা গেলে দাফনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে রাজধানীর রাজাবাজার ছাড়াও ওয়ারী এলাকা লকডাউনের কথা ছিল। তবে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানিয়েছেন, ‘‘এমন কোন নির্দেশনা আমি পাইনি।’’ রাজধানীর বাইরে নারায়ণগঞ্জের তিনটি এলাকাও লকডাউন করার কথা বলা হয়েছে।
পূর্ব রাজাবাজার এলাকা রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগর থানার মধ্যে পড়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানে আলম মুন্সী বলেন, ‘‘আজকেই আমরা মেয়রসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেখানেই আমাদের লকডাউনের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকেল থেকেই ওই এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছে, জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেন তারা কিনে রাখেন। ওই এলাকার কাউকেই ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না।’’
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘গত শনিবার আমরা সরকারের উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেখানেই পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এখন বাস্তবায়নের পালা। এছাড়া এটা নিয়ন্ত্রণের তো আর কোন পথ দেখা যাচ্ছে না। এই প্রক্রিয়ায় সফল হওয়া যাবে বলেই আমাদের জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।’’
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, আমরা তো শুরু থেকেই এভাবে কাজ করতে বলছি। এটাই মহামারি নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি। ঢাকার টোলারবাগে বা মাদারীপুরের শিবচরে এটা করে ভালো ফল মিলেছে। এখন এটা না করতে পারলে কিন্তু একসময় পুরো দেশটাই রেড জোন ঘোষণা করা লাগতে পারে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করেই সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে ঝুকি নেওয়া উচিৎ হবে না। এটা শুধু হুকুম দিয়ে হবে না, মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রান্তিক মানুষ যারা তাদের ঘরে খাবার পৌঁছাতে হবে। তাদের সামাজিক সহযোগিতা ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা করতে হবে। দেখেন, কার্ফু দিলে কি কোন লাভ হবে? সেনারা কি কাউকে গুলি করতে পারবে? এটা তো আইন শৃঙ্খলার সমস্যা না, এটা জনস্বাস্থ্যের সমস্যা।
অধ্যাপক আজাদ বলেন, করোনা সংক্রমণ বিবেচনা করে চিহ্নিত করা রেড, ইয়লো ও গ্রিন এলাকা কীভাবে পরিচালিত হবে, তার গাইডলাইনও ইতিমধ্যে ঠিক করা হয়েছে। লকডাউন ঘোষিত এলাকায় চলাচল বন্ধ থাকবে। কেবল রাতে মালবাহী যান চলতে পারবে। ওই এলাকার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য থাকবে হোম ডেলিভারি ও নির্ধারিত ভ্যানে করে কাঁচাবাজার কেনাবেচার সুযোগ। এসব এলাকার অফিস-আদালত বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। খুব প্রয়োজনে চললেও তা হবে খুবই নিয়ন্ত্রিতভাবে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরান বলেন, পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দাদের জন্য নমুনা সংগ্রহের বুথও করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি প্যানেল তৈরী করা হয়েছে। এটুআইয়ের সহযোগিতায় ২৪ ঘন্টা টেলিফোনে চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া যাবে। ওই এলাকার বাসিন্দারা চাইলেই যে কোন ধরনের সহযোগিতা পাবেন।
জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যকরের বিষয়ে গাইডলাইনে বলা হয়েছে, রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত গ্রামীণ এলাকায় মুদির দোকান ও ফার্মেসি খোলা রাখা গেলেও কোনো ধরনের রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান ও টং দোকান খোলা রাখা যাবে না। গ্রামীণ এলাকায় খোলাবাজার চালানো গেলেও শহরে কোনোভাবেই বাজার খোলা রাখা যাবে না।
এক্ষেত্রে হোম ডেলিভারির প্রস্তাবনা করা হয়েছে নগর এলাকার জন্য। এসব এলাকায় মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানে কেবল খাদেম বা কর্মচারীরাই থাকতে পারবেন। মোবাইল টপআপ ও এমএফএস সেবা খোলা রাখা গেলেও ব্যাংকিং খাতে কেবল এটিএম বুথ খোলা থাকবে। রোগী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে ২৪ ঘণ্টা নমুনা সংগ্রহের জন্য পর্যাপ্ত বুথ থাকবে। এছাড়াও কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির হোম কোয়ারান্টাইন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।
Discussion about this post