জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
এম এ হান্নান ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অন্যতম বিশ্বস্ত সহচর এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং একজন দক্ষ শ্রমিক সংগঠক এবং জাতীয় পর্যায়ের জননন্দিত শ্রমিক নেতা।
এম. এ. হান্নান হলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ। তিনিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরিত স্বাধীনতার ঘোষণা কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে তাকে “স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয়।
জন্ম ১৯৩০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার তেহট্ট থানার খাসপুর গ্রামে। তার পিতা মওলানা মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান ব্রিটিশ ভারতে কংগ্রেস ও পরে মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভারত বিভাগের পর মুহিবুর রহমান ১৯৪৮ সালে সপরিবারে মেহেরপুর জেলার আমঝুপিতে এসে বসতি স্থাপন করেন।
শিক্ষাজীবন
এম.এ হান্নান ১৯৪৯ সালে মেহেরপুরের দারিয়াপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫১ সালে কুষ্টিয়া কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজে বি.এ অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রামে সিটি কলেজে নৈশ বিভাগে ভর্তি হন।
কর্মজীবন
তিনি চার্টার্ড ব্যাংকে চাকরি গ্রহণ করেন। পরে তিনি আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপক হিসেবেও চাকরি করেন।
এম.এ হান্নান ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সম্মেলনে (আই এল ও কনভেনশন) যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ রেল শ্রমিক লীগের সভাপতি, চট্টগ্রাম জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম শহর ও জেলা আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ গঠিত হলে জননেতা এম এ হান্নান ছিলেন সভাপতি (১৯৭২-১৯৭৪)।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
এম.এ হান্নান চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিরোধী আন্দোলনে তিনি অংশ নেন। ১৯৬৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৭০ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঐতিহাসিক ছয় দফার এক দফার অন্যতম প্রবক্তা জননেতা এম এ আজিজ (এমএনএ) এর মৃত্যুতে জননেতা এম এ হান্নান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব (১৯৭১-১৯৭২ সাল) পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদে এম এ হান্নান ছিলেন অন্যতম সদস্য।বাকি সদস্যরা ছিলেন –
– জননেতা জহুর আহাম্মদ চৌধুরী (এমএনএ)
সভাপতি চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগ (১৯৬৩-১৯৭২ সাল) চট্টগ্রাম শহর আওয়ামীলীগ গঠিত হবার পূর্বে তিনি চট্টগ্রাম পৌর আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টাতা সভাপতি ছিলেন।
– জননেতা এম আর সিদ্দিকী (এমএনএ)
সভাপতি, চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ (১৯৬৪-১৯৭২ সাল)।
– জননেতা এম এ মান্নান
সাধারণ সম্পাদক, শহর আওয়ামী লীগ (১৯৬৬-১৯৭২সাল)।
এবং
– জননেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ (এমএনএ)
যিনি ৭০ এর নির্বাচনে মুসলিমলীগের প্রভাবশালী নেতা এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার ফজলুল কাদের চৌধুরীকে পরাভূত করে এমএনএ নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।
১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে ‘সোয়াত’ জাহাজ থেকে পাকিস্তানিদের অস্ত্র খালাসের বিরুদ্ধে ছাত্র শ্রমিক জনতাকে নিয়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন।এই চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এম এ হান্নানই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সর্ব প্রথম চট্টগ্রাম কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে রাজনৈতিক ভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন।
পরে তিনি আগরতলা যান এবং সেখানে হরিনা যুব শিবির প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন।
মৃত্যু
এম.এ হান্নান ১৯৭৪ সালের ১১ জুন এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় চৌদ্দগ্রামে এক সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হন এবং পরদিন ফেনী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রেরিত স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের প্রথম পাঠক, চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জননেতা এম এ হান্নান।
পুরস্কার ও সম্মাননা
এদেশের স্বাধীকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসাবে পরিচিত স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয় তাকে।
Discussion about this post