আন্তর্জাতিক ডেস্ক
করোনার চিকিৎসা উদ্ভাবনে সারা বিশ্বেই তোড়জোড় চলছে। বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এরই মাঝে হোমিওপ্যাথি ওষুধ ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ করোনা চিকিৎসায় কার্যকর কিনা তা নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এ ওষুধটিকে কেউ কেউ করোনা চিকিৎসায় সুপারিশ করছেন। আবার অন্যদিকে অনেকেই দেখছেন ভয়ের চোখে।
সম্প্রতি ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে করোনা চিকিৎসায় এ ওষুধ সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে দেশটির আয়ুষ মন্ত্রক একে করোনার অন্যতম প্রতিষেধক হিসেবে তালিকায় রাখে। যদিও করোনার চিকিৎসায় আর্সেনিকাম কার্যকর, এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য, প্রমাণ মেলেনি।
শুক্রবার (১২ জুন) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি রাজস্থান, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ ও কেরালা সরকার আর্সেনিকাম ওষুধটিকে করোনার চিকিৎসায় সুপারিশ করে। মহারাষ্ট্র সরকার এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করলেও মুম্বাইয়ের পৌর কর্তৃপক্ষ অন্তত দুটি ওয়ার্ডের অতি ঝুঁকি সম্পন্ন এলাকায় এরি মাঝে এ ওষুধ বিতরণ করেছে। হরিয়ানা কারা কর্তৃপক্ষ ও মুম্বাই পুলিশও যথাক্রমে বন্দি ও আধিকারিকদের মধ্যে এই ওষুধ বিতরণ করছে।
এমনকি যেসব রাজ্যে এই ওষুধ ব্যবহারের প্রটোকল নেই, সেখানেও মানুষজন এটি কেনার জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকানে ভিড় করছেন। নানা জায়গায় এটি এখন ৩ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় কেমিস্টরাও এটি মজুত করতে শুরু করেছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, গত ২৮ জানুয়ারি ভারতের সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি’র (CCRH) সায়েন্টিফিক অ্যডভাইজরি বোর্ডের ৬৪তম সভায় মত প্রকাশ করা হয় যে, আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ করোনা প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কাউন্সিল একটি ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করে জানায়, এই ওষুধ কেবলমাত্র ফ্লুর সম্ভাব্য প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬ মার্চ যখন ভারতেও করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৫, সে সময়ে আয়ুষ মন্ত্রকের সচিব রাজেশ কোটেচা সব মুখ্য সচিবকে করোনার প্রতিষেধক ওষুধের তালিকা প্রস্তুত করতে বলেন। এ সময় আর্সেনিকামের সুপারিশ ছিল।
এদিকে এ ওষুধ প্রসঙ্গে আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর ডক্টর বলরাম ভার্গব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছন, আমরা ও ওষুধ নিয়ে কোনও গাইডলাইন জারি করিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ নিয়ে কোনও গাইডলাইন দেয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখ্য বিজ্ঞানী ডক্টর সৌম্য স্বামীনাথন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, এ ওষুধ কাজ করে বলে কোনও প্রমাণ নেই।
অন্যদিকে মহারাষ্ট্র সরকার এই হোমিওপ্যাথি ওষুধ কাজ করে কিনা তা পর্যালোচনার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে। এর সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা এখনও সিদ্ধান্তে পোঁছাননি।
মহারাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য বিভাগের জয়েন্ট ডিরেক্টর ডক্টর অর্চনা পাটিল জানান, এই ওষুধ ভিটামিন সি ট্যাবলেটের মতো ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, প্রতিষেধক হিসেবে নয়।
করোনা রোধে আর্সেনিকামের ব্যাপক চাহিদা নিয়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এব্যাপারে প্রখ্যাত হোমিপ্যাথি চিকিৎসক বিজয় কর জানান, তাদের সংস্থা থেকে আয়ুষ মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, এই ওষুধ সুপারিশ করার আগে এর কার্যকারিতা নিয়ে কোনও ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা হলো না কেন।
Discussion about this post