বিশেষ প্রতিবেদক
করোনায় ভয়াবহ ক্ষতির পথে হাঁটছে দেশের শিক্ষা খাত। আটকে গেছে এইচএসসি পরীক্ষা আর একাদশে ভর্তি কার্যক্রম। সিদ্ধান্তে জট বেঁধেছে আগামীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি, স্কুলের বার্ষিক ও একাদশ প্রথম বর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে। এসব পরীক্ষা যথাসময়ে নেওয়া নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তাকিয়ে আছে করোনা পরিস্থিতির দিকে। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য সে অনুযায়ী বিকল্প ভেবে রেখেছে মন্ত্রণালয়।
আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সেপ্টেম্বরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে কি না, সেটা আগস্টে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি সেপ্টেম্বরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা না যায়, তাহলে বিকল্প সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করার চিন্তা করা হচ্ছে।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, যদি সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়, তাহলে শিক্ষাবর্ষ যেকোনো উপায়ে ডিসেম্বরে শেষ করা যাবে। আর যদি সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা না যায়, তাহলে বিকল্প প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের না পড়িয়ে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠানো যাবে না। তাই শিক্ষাবর্ষ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান আরো বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার এক মাস পূর্বে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেওয়া হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি শেষেই কলেজে যেতে পারে।
এর আগে সিলেবাস কমিয়ে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব ছুটি বাতিল করে শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করার প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, সে কারণে এই প্রস্তাবনা হয়তো আর আলোর মুখ দেখবে না। তাই শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের দুই বা তিন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা ছাড়া আর উপায়ও হয়তো থাকবে না এমন আভাস দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রতিটি শ্রেণির সিলেবাস করা হয়েছে ঐ শ্রেণির নির্ধারিত দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য। সিলেবাস কমানো হলে নির্ধারিত জ্ঞান অর্জিত হবে না। এতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। এ ছাড়া তাড়াহুড়া করে সিলেবাস শেষ করলে শিক্ষর্থীরা ঐ জ্ঞান ধারণ করতে পারবে না। তাই তারাও শিক্ষাবর্ষ অন্তত দুই থেকে তিন মাস বাড়ানোর পক্ষে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা ইত্তেফাককে বলেন, শিগিগরই বিষয়টি নিয়ে সভা হবে। সেই সভায় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, বার্ষিক পরীক্ষা পুরো সিলেবাসে হয় না। অর্ধেক সিলেবাসে হয়। তাই সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজ চালু করা গেলে ডিসেম্বরে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া যাবে। আর জেএসসি পরীক্ষা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
এদিকে স্কুল সেপ্টেম্বরে খোলা না গেলে অনেক কিন্ডারগার্টেন ও কম শিক্ষার্থী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে ঐসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়তে পারে। এছাড়া স্কুল-কলেজে টিউশন ফি নিয়েও অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের মধ্যে মতবিরোধ বাড়ছে। অভিভাবকেরা চাইছেন এখনই টিউশন ফি না দিতে। আর স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে অভিভাবকদের প্রতিনিয়ত তাগাদা দেওয়া হয়েছে টিউশন ফি পরিশোধের জন্য।
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের দুর্যোগে উচ্চ শিক্ষা স্তরেও ভয়াবহ সেশনজট সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। তবে সেশনজট কমাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যদি শিগিগরই চালু করা না যায়, তাহলে তারাও অনলাইন ক্লাসের পথে হাঁটবে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
Discussion about this post