নিউজ ডেস্ক
করোনার কারণে সৌদি সরকার এ বছর বিদেশ থেকে কাউকে হজের সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশের নিবন্ধিত প্রায় ৬৫ হাজার ব্যক্তি হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাঁরা চাইলে যেকোনো সময় টাকা ফেরত নিতে পারবেন। আর যাঁরা টাকা ফেরত নেবেন না তাঁরা আগামী বছর হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার(২৩জুন) এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ধর্মসচিব জানিয়েছেন, এসব বিষয় নিয়ে আজ বুধবার(২৪জুন) মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে হজ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সোমবার(২২জুন) রাতে আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় তাঁরা এ বছর বাংলাদেশ তথা বাইরের কোনো দেশ থেকে কোনো হাজি নিতে পারছেন না। এ জন্য তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে আগামী দিনে বেশিসংখ্যক হজযাত্রী নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
এদিকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার হজযাত্রীদের হজে পাঠাতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন বেসরকারি এজেন্সি মালিকরা। একই সঙ্গে টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মাঝেও হতাশা দেখা দিয়েছে। করোনার কারণে হজে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেলেও আগামী বছর সবার ভাগ্যে এ সুযোগ হয় কি না, তা নিয়েও অনেকে চিন্তিত।
বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজযাত্রীদের টাকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অ্যাকাউন্টে ব্লক করা আছে। এটা এজেন্সির কেউ নিতে পারবে না। হজযাত্রীরা চাইলে ফেরত নিতে পারবেন। তবে টাকা ফেরত নিলে তাঁর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এতে আগামীতে তাঁর হজে যাওয়ার সুযোগ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এবার হজে পাঠাতে না পারায় দেশের এজেন্সি মালিকদের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে।
এই পরিস্থিতিতে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকে অফিস চালাতে পারবেন না। আবার অনেকে চাকরি হারাবেন।’
করোনার কারণে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদেশিদের ওমরাহ পালনের অনুমতি দেওয়া স্থগিত করে সৌদি আরব। পরে পর্যটন ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় লকডাউন করা হয় পুরো দেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হজ অনুষ্ঠান নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
অবশ্য দুই মাস পর লকডাউন শিথিল এবং পর্যায়ক্রমে সৌদির মসজিদগুলো খুলে দেওয়ায় হজ নিয়ে নতুন আশার সৃষ্টি হয়। সবাই সৌদির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন। তবে সৌদির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় আগেই এবার হজে লোক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর নতুন করে বিদেশ থেকে কেউ হজের জন্য সৌদি আরবে যেতে পারবেন না। তবে সেখানে আগে থেকেই অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে সীমিতসংখ্যক লোক নিয়ে পালিত হবে এবারের হজ।
করোনা পরিস্থিতির কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যেও হজের আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগ্রহীদের নিবন্ধন কার্যক্রম চালায় ধর্ম মন্ত্রণালয়। ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নিবন্ধন কার্যক্রমের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল শেষ করা হয়। সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার জন। কিন্তু করোনা আতঙ্কের কারণে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাত্র তিন হাজার ৪৫৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ হাজার ১৪২ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেন।
এবার হজে যেতে আগ্রহীদের জন্য তিন ধরনের প্যাকেজ রেখেছিল সরকার। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজে চার লাখ ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় প্যাকেজে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় প্যাকেজে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে আগ্রহীদের নিবন্ধন করতে বিমানভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ এক লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ টাকা জমা দিতে হয়। আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজের পুরো টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
Discussion about this post