অনলাইন ডেস্ক
চীনের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল হতে পারে বাংলাদেশে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
শুক্রবার (২৬ জুন) হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘বাংলাদেশে করোনা: ছয় মাসের পর্যবেক্ষণ শীর্ষক’ ভার্চুয়াল কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন। অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ট্রায়ালের সূত্র ধরে বাংলাদেশেও সেই ভ্যাকসিনের উৎপাদন শুরু হতে পারে। আর এটা দেশের মানুষের জন্য করোনা মোকাবিলায় আরেক ধাপ সাফল্য বয়ে আনবে।’
আলোচনায় আরও অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেনসহ অন্যরা।
ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ।
কনফারেন্সে বক্তারা বলেন, দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত একজন রোগী ১ দশমিক ৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানান।
গত ২৩ জুন বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ তথ্য জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা এও বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ পিকের (সর্বোচ্চ সংক্রমণ) কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। কোরবানি ঈদের সময় যদি মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে সংক্রমণ আরও বাড়বে।
অনলাইন সভায় বলা হয়, একজন করোনা সংক্রমিত রোগী একটি নির্দিষ্ট সময়ে গড়ে কতজনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটাচ্ছেন, সেই ধারণা পাওয়া যায় যে সংখ্যার মাধ্যমে, সেটিকে ইংরেজি অক্ষর ‘আর’-এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ‘আর’-এর গড় মান ২ থেকে ২ দশমিক ৫— অর্থাৎ প্রত্যেক কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে দুই জনের বেশি মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাচ্ছেন। তবে বিভিন্ন দেশ এবং ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে এই ‘আর’-এর মান পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
বক্তারা করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং এর অধিদফতরগুলোতে নেতৃত্ব ও সমন্বয়ের ঘাটতির কথা উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনার ঘাটতি, দক্ষ জনবল ও অবকাঠামোর অভাব, দেশি বিশেষজ্ঞদের ঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারাসহ বিভিন্ন দুর্বলতার কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে এখনও জনগণের সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাসও কম বলে উল্লেখ করেন তারা।
সংক্রমণের মাত্রা হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়ে ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আগে দেশে আক্রান্ত একজন থেকে আরও দুই জনের বেশি হারে এই ভাইরাস ছড়াতে পারতো। কিন্তু এখন সেই রিপ্রোডাকশন রেট বা ‘আর’ রেট নেমে এসেছে ১ দশমিক শূন্য ৫-এ। এটা খুবই ভালো লক্ষণ। এখন আরও নিচে নামাতে পারলে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে। তাছাড়া এখনও প্রতিদিন সংক্রমণের যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, তা অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, আমাদের দেশে ‘আর’ রেট হঠাৎ করে খুব উঁচুতে ওঠার মতো পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আমাদের এখন লক্ষ্য ‘আর’ রেট-কে আরও নিচের দিকে নামিয়ে আনা।’
চীনের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল বাংলাদেশে হতে পারে বলে সভায় জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশে গত ছয় মাস ধরে যে কার্যক্রম চলছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পরিকল্পনা গ্রহণ, কার্যক্রম বাস্তবায়ন, হাসপাতাল ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত গবেষণা, কেনাকাটাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে নানা ধরনের ঘাটতি ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। যদিও শুরুর দিক থেকে এখন পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি দেখা যাচ্ছে। তবু এখনও পর্যাপ্ত হচ্ছে না। এছাড়া, জোনিং সিস্টেম নিয়েও মানুষের এক ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে।
Discussion about this post