নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ৩১ মে প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। এবার ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ফলাফলের দুই মাস পার হওয়ার পরও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে একাদশে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে অনেকটাই অলস সময় কাটাচ্ছে উত্তীর্ণরা। দীর্ঘদিন পড়ালেখা বন্ধ থাকলে অনেক শিক্ষার্থীরই বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে এ জন্য ভর্তির আগেই বাজারে উচ্চ মাধ্যমিকের বই ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২ জুলাই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা যায়, দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি উপযোগী কলেজের সংখ্যা চার হাজার ছয় শর বেশি। এতে আসনসংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। যেহেতু ভর্তিতে আসনের কোনো সংকট নেই, তাই শিক্ষার্থীদের বই সংগ্রহ করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছে এনসিটিবি। এরই মধ্যে বাজারে একাদশের পাঠ্য বই পাওয়া যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যদি শিক্ষার্থীরা বই হাতে পায়, তাহলে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বাধা থাকবে না। তবে করোনার মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করাটা বিপজ্জনক। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অন্তত এক মাস আগে একাদশে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে, যাতে প্রতিষ্ঠান খুললেই ক্লাসে বসতে পারে একাদশের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। তাই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম এখনই শুরু করা যাচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ দিন আগে আমরা ভর্তি কার্যক্রমটা শুরু করার আশা রাখছি।’
এনসিটিবি সূত্র জানায়, এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যস্ত রাখতে উচ্চ মাধ্যমিকের বই বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা তিনটি বই বাংলা, ইংরেজি ও বাংলা সহপাঠ এখন থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পাওয়া যাবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বইটি বাজারে পাওয়া যাবে। এ বইটি এবার প্রথমবারের মতো এনসিটিবির তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হচ্ছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে আছে। অভিভাবকদের অনেকেই নানা কাজে বাইরে বের হচ্ছেন। তাঁরা হয়তো সন্তানের জন্য বইটি কিনতে পারবেন। এ জন্য বাজারে আমরা বইয়ের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যমান তিনটি বই বিক্রির অনুমতি দিয়েছি।’
জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিকে মোট পাঠ্য বই ৩৯টি। এর মধ্যে সরকার এত দিন তিনটি বই প্রকাশকদের মাধ্যমে বাজারজাত করে আসছিল। বিনিময়ে ১১ শতাংশ হারে রয়ালটি নেয় সরকার। এগুলো হচ্ছে—বাংলা, ইংরেজি ও বাংলা সহপাঠ। বাকি বইগুলো বেসরকারি প্রকাশকরা এনসিটিবি থেকে অনুমোদন নিয়ে রয়ালটি দেওয়ার মাধ্যমে বাজারজাত করে আসছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ জেলা প্রশাসক সম্মেলনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন শিক্ষাবর্ষে আইসিটি নামের বইটিও সরকারিভাবে বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও পাঠ্য বইয়ের কারিকুলাম আধুনিকায়নের কাজ বেশি দূর আগানো যায়নি। ফলে নতুন কারিকুলাম প্রবর্তন এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় আগের বছরের কারিকুলাম ও বই নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য বহাল রাখা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের কোনো বইয়ে এবার কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন হচ্ছে না। এ ছাড়া একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষার্থীদের বই বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে তাগিদ আসছিল। তাই উচ্চ মাধ্যমিকের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের বই বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর সময়োপযোগী এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে পারবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান আরো জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের চুক্তির মেয়াদ আরো চার মাস বাড়ানো হয়েছে। ফলে অক্টোবর পর্যন্ত এর আগে মুদ্রিত ও বাজারজাত করা পাঠ্যপুস্তক তিনটি বই ক্রয়-বিক্রয়, সংগ্রহ ও পাঠদান কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীর হাতে যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানোর কাজে কোনো প্রকার বাধা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অসদুপায় অবলম্বন ও তথ্য বিকৃতিসহ নকল পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ ও সরকারি কাজে বাধা হিসেবে গণ্য হবে। দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা রাখে এনসিটিবি।
Discussion about this post