বিশেষ প্রতিবেদক
করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। এলোমেলো হয়ে গেছে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। গত ১ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও করোনার কারণে আটকে গেছে, ফলে আটকে গেছে ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতও।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এইচএসসি পরীক্ষা হবে না বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘করোনার মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব। লাখ লাখ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মচারী একত্র হবেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এতে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পরীক্ষা হবে না, আমাদের সন্তানদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারব না।’
জানা গেছে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষা না দিতে পারায় শিক্ষার্থীদের সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। ফলে ক্ষুব্ধ একইসঙ্গে উদ্বিগ্নও তারা। গত মার্চে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়ায় চার মাস অলস বসে আছেন তারা। কবে নতুন তারিখ ঘোষণা হবে তাও অনিশ্চিত।
অভিভাবকরা জানান, এ বিষয়গুলো তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, হাঁপিয়ে উঠেছে ছেলেমেয়েরা। পুরোপুরি প্রস্তুতি নেওয়ার পর কলেজগুলো বন্ধ হয়ে গেল। এখন মনঃসংযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করেও সম্ভব হচ্ছেনা। অনেকে পড়াশোনাই ছেড়ে দিয়েছে!
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বেলেন, আগামী মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সিলেবাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। তখন সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হবে, ক্লাস-পরীক্ষাও কমিয়ে আনা হতে পারে।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজনের সময়সীমা কমানো হবে। এক মাসের মধ্যে শেষ হতে পারে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি এ বিষয়ে এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে ১৫ দিনের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। নভেম্বরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার সূচি রয়েছে। এতে করোনার কারণে জট লেগে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মোকবুল হোসেন বলেন, যে পরীক্ষাগুলোর মাঝে দুই থেকে তিন দিন বিরতি ছিল, সেগুলো কমিয়ে এক দিন করা হতে পারে।
এদিকে, এইচএসসি পরীক্ষার বিষয় কমানোর যে খবর ছড়িয়েছে, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, সে সম্ভাবনা কম। শিক্ষার্থীরা তো তাদের সিলেবাস শেষ করেছে। তাহলে বিষয় কমিয়ে লাভ কী? তবে কোনোভাবেই যদি এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া না যায়, আরেকটি বছর চলে আসে কিংবা সময়ে কুলানো না যায়, তখন সম্ভাবনা হিসেবে বিষয়টি ভাবা যেতে পারে।
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই দীর্ঘ পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। না হলে করোনার পর পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সরকারের পক্ষে কঠিন হবে।
Discussion about this post