অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিকে বড় অংকের তহবিল প্রদান করছে, বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে আগাম ক্রয় চুক্তিও সম্পন্ন করে ফেলেছে। এতে করে ভ্যাকসিন কার্যকর প্রমাণিত হলে প্রথম দিকের ডোজ প্রাপ্তি দেশ দুটির জন্য প্রায় নিশ্চিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব দেশের জন্য ন্যায্য ভ্যাকসিন বিতরণ ব্যবস্থার কথা বললেও কার্যকর কোনও উদ্যোগ দৃশ্যমান ছিল না। অবশেষে বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্য আয়ের ৯২টি দেশের জন্য ভ্যাকসিন নিয়ে সুসংবাদ দিলো আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট গ্যাভি, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ও ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদক সিরাম ইন্সটিটিউট।
৭ আগস্ট গ্যাভির ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরি করে তা বাজারজাত করতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ও গ্যাভির সঙ্গে সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) এর চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও নোভাভ্যাক্সের করোনা ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর তার ১০ কোটি ডোজ তৈরি করে বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হবে। এই সরবরাহের দায়িত্বে থাকবে সিরাম ইন্সটিটিউট। এর জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার তহবিল দেবে দ্য বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
জোটের কোভ্যাক্স অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্ট (অ্যাএমসি) মেকানিজমের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম পড়বে সর্বোচ্চ ৩ ডলার, বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ২৫৪ টাকা।
গ্যাভি’র সিইও ড. সেথ বার্কেল বলেন, অনেকবার আমরা দেখেছি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো নতুন চিকিৎসা, রোগ পরীক্ষা ও নতুন ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে থাকে। করোনার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমরা এমনটি চাই না। যদি ধনী দেশগুলোই শুধু সুরক্ষিত হয় তাহলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, শিল্প ও সমাজ মহামারিতে বিপর্যস্ত হতে থাকবে। এমনটি যাতে না ঘটে সেজন্য আমাদের এই নতুন সহযোগিতাচুক্তি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শুধু কয়েকটি ধনী দেশ নয়, সব দেশের জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য সামর্থ্য তৈরির উদ্যোগ হবে তা। আমরা চাই সিরামের অন্যান্য ভ্যাকসিন উৎপাদকরাও এভাবে এগিয়ে আসবে।
গত সপ্তাহে গ্যাভি’র পরিচালনা বোর্ড অ্যাএমসি’র আওতায় সহযোগিতা দেওয়া হবে এমন ৯২টি দেশের তালিকা চূড়ান্ত করেছে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে, যদি আস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কার্যকরী প্রমাণিত হয় তাহলে গ্যাভির সহযোগিতা লাভের যোগ্য ৫৭ টি দেশ তা পাবে। আর যদি নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিন সফল হয় তাহলে অ্যামসি’র আওতায় থাকা ৯২টি দেশই তা পাবে। ভ্যাকসিন দুটির উদ্ভাবকদের সঙ্গে সিরাম ইন্সটিটিউটের স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় এই দেশগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহে বাধা নেই।
গ্যাভির তালিকায় থাকা নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, আফগানিস্তান, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, শাদ, কঙ্গো, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, গিনি-বিসাউ, হাইতি, উত্তর কোরিয়া, লাইবেরিয়া, মাদাগাস্কার, মালাউয়ি, মালি, মোজাম্বিক, নেপাল, নাইজার, রুয়ান্ডা, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, তাঞ্জানিয়া, টোগো, উগান্ডা, ইয়েমেন।
মধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, অ্যাঙ্গোলা, আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, ভুটান, বলিভিয়া, কাবো ভার্দে, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, কোমোরস, আইভরি কোস্ট, জিবুতি, মিশর, এল সালভাদর, ইসওয়াতিনি, ঘানা, হন্ডুরাস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, কিরিবাতি, কিরগিজ, লেসেথো, মৌরিতানিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, মোলডোভা, মঙ্গোলিয়া, মরক্কো, মিয়ানমার, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপাইন, সেনেগাল, সোলোমন আইল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তৈমুর, তিউনিশিয়া, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভানাউতু, ভিয়েতনাম, ফিলিস্তিন, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।
তালিকায় থাকা অন্যান্য দেশগুলো হলো, ডমিনিকা, ফিজি, গ্রেনাদা, গায়ানা, কসোভো, মালদ্বীপ, মার্শল আইল্যান্ডস, সামোয়া, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেট অ্যান্ড গ্রেনাডাইন, টোঙ্গা ও টোভালু।
Discussion about this post