অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে ওষুধ ও ভ্যাকসিন (টিকা) তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। এখানকার কোম্পানিতে ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরি করে নিজেদের দেশের পাশাপাশি অন্য দেশেও রফতানি করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম যাতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিনা শুল্কে রফতানি করতে পারেন, সে উদ্যোগ নিতেও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এগ্রিমেন্টের (টিকফা) ভার্চুয়াল বৈঠকে এই প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী প্রতিনিধি ক্রিস উইলসন নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া একটি সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ভ্যাকসিন ও ওষুধ উৎপাদনে এই চুক্তির প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, টিকফার এবারের বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল ঢাকায় গত মার্চে। এ লক্ষ্যে দুই পক্ষ আলোচনার এজেন্ডাও চূড়ান্ত করেছিল, যেখানে ১৮টি ইস্যুর মধ্যে ধোঁয়ার সাহায্যে তুলা জীবাণুমুক্ত করা, চাল রফতানিতে ভর্তুকি, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছিল।
কিন্তু মার্চের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির তীব্রতা শুধু সেই বৈঠকটি পিছিয়ে দেয়নি, এর আলোচনার এজেন্ডাও পাল্টে দিয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে যে ভার্চুয়াল বৈঠকটি হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করোনার ভ্যাকসিন ও ওষুধ উৎপাদনের বিষয়ে চুক্তি এবং করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা যে অর্ডার বাতিল করেছে, সেগুলোর ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়। এছাড়া জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের ইস্যুটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তোলা হলেও যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতো বলেছে, তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করছে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রসহ ১০৭ দেশে রফতনি হচ্ছে সেসব ওষুধ। এ বিবেচনায় দেশটিতে এখানকার কোম্পানিতে ওষুধ প্রস্তুত করে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পিপিই, মাস্কসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করে রফতনি করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসব সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিতে শূন্য শুল্কের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের যেকোনো তৈরি পোশাকপণ্য দেশটির বাজারে প্রবেশ করতে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। পিপিই, মাস্ক যেহেতু পোশাক কারখানায় তৈরি হচ্ছে বা কাপড় থেকে তৈরি, সে জন্য এ ক্ষেত্রেও ওই পরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হয়।
এদিকে বৈঠকে তুলা আমদানিতে ফিউমিগেশন পরীক্ষা বাতিল করা এবং কিছু পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) সই হয়। প্রতিবছর টিকফার একটি বৈঠক হয়। সর্বশেষ বৈঠক ও পরবর্তী বৈঠকের মধ্যবর্তী সময়ে আগের সিদ্ধান্তের অগ্রগতি ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বৈঠকও হয়। সর্বশেষ গত মার্চে ঢাকায় টিকফার পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী বছর ওয়াশিংটনে ষষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
Discussion about this post