অনলাইন ডেস্ক
নভেল করোনাভাইরাসের টিকা বা ভ্যাকসিন নিয়ে যেকোনো সময় সুখবর শোনাতে পারে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট মডার্না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পর মডার্নার ভ্যাকসিন আশা জাগাচ্ছে।
ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের সবচেয়ে বড় ট্রায়াল করছে মডার্না বায়োটেকনোলজি। যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে টিকার ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। মডার্না জানিয়েছে, তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালের রিপোর্ট ক্রমেই ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় খবর হলো ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের শরীরেও টিকার ডোজে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, কমবয়সীদের চেয়েও কয়েকজন প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির সংখ্যা অনেক বেশি। যার অর্থ হলো, শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে বয়স্কদের মধ্যেও, ভ্যাকসিন ট্রায়ালের যেটা অন্যতম বড় ইতিবাচক দিক। সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এ খবর জানিয়েছে।
মডার্নার ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রথম পর্বের প্রতিবেদন এসেছিল আগেই। সে প্রতিবেদনে গবেষকরা দাবি করেছিলেন, টিকার ডোজে অন্তত ৯০ শতাংশ মানুষের শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তবে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের ট্রায়ালের প্রতিবেদন সামনে এনেছিল মডার্না। পরে জানা যায়, ৫৫ বছরের বেশী বয়সীদেরও ভ্যাকসিনের ইনজেকশন দিয়ে সম্ভাব্য ফল খতিয়ে দেখছেন ভাইরোলজিস্টরা। ২০ জন প্রবীণকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, যাঁদের কোনো ক্রনিক রোগ নেই। সে ট্রায়ালের প্রতিবেদন সামনে এনে ‘মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ জানিয়েছে, বয়স্কদের শরীরেও টিকার ডোজ ভালো প্রভাব ফেলেছে। সাধারণত দেখা যায়, ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের শরীরে টিকার ডোজে তেমনভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি হয় না। কিন্তু, মডার্না ভ্যাকসিনের ডোজে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে বয়স্কদের মধ্যেও। এই ট্রায়ালের প্রতিবেদন দেখে প্রবীণদের জন্যও টিকার ডোজ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে মডার্না।
করোনার ভ্যাকসিন দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না বায়োটেকনোলজি। অক্সফোর্ড ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) প্রযুক্তিতে ভ্যাকসিন বানিয়েছে আর মডার্না মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (আরএনএ) সিকোয়েন্সকে কাজে লাগিয়ে করোনার টিকা তৈরি করেছে। মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফেন ব্যানসেল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্বে টিকার ট্রায়াল চলছে। এই ট্রায়ালের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) ও বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ও হোয়াইট হাউসের প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এপিডেমোলজিস্ট অ্যান্থনি ফসির তত্ত্বাবধানে এমআরএনএ ভ্যাকসিন বানিয়েছে মডার্না। এ গবেষণায় রয়েছেন এনআইএইচের অধীন ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা। সুইজারল্যান্ডের অন্যতম বড় ভ্যাকসিন ও ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা লোনজ়া গ্রুপ এজির সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তিও হয়েছে মডার্নার। চুক্তিতে প্রতি বছরই প্রায় ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি হবে বলে জানিয়েছে মডার্না।
এমআরএনএ ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয় গত মার্চ মাসে। প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়া হয় দুই সন্তানের মা ৪৩ বছরের জেনিফার হ্যালারকে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয় মে মাসে। প্রথম পর্বে ৪৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়া হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবকদের তিনটি দলে ভাগ করে তিন রকমের ডোজ—২৫ মাইক্রোগ্রাম, ১০০ মাইক্রোগ্রাম ও ২৫০ মাইক্রোগ্রাম—দেওয়া হয়েছিল। মডার্না দাবি করেছে, প্রত্যেকের শরীরেই আরএনএ ভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও আগের চেয়ে বেড়েছে। তৃতীয় পর্বে ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজের ইনজেকশন দিচ্ছে মডার্না। এই পর্বের ট্রায়ালের ফলাফলও ইতিবাচক বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
Discussion about this post