অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন করোনা ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন ও উৎপাদন নিয়ে চলছে নানামুখী তৎপরতা, বাংলাদেশেও সেই সূত্র ধরে চলছে বিভিন্ন প্রস্তুতি। একদিকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে চলছে অন্যদেশে উৎপাদিত ভ্যাকসিন সংগ্রহের তৎপরতা, সেই সঙ্গে দেশে কোনো কোনো ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের ক্ষেত্রেও হচ্ছে অগ্রগতি। চীনের সিনোভ্যাকের ট্রায়ালের অনুমতির পর এখন প্রক্রিয়া চলছে ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমতির বিষয়ে। পাশাপাশি বাইরের একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারি ভিত্তিতে দেশেও ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কমপক্ষে দুটি দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন ইউনিট। উৎপাদনের সুযোগ পেলে আপাতত দেশে প্রতি মাসে সিঙ্গল ডোজের এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এখন অপেক্ষা কেবল প্রত্যাশিত ভ্যাকসিনের সফল উদ্ভাবনের।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত দেশে দুটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ দুটি ভ্যাকসিন উৎপাদন ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। এর একটি হচ্ছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিউক্যালস, আরেকটি হচ্ছে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। আরো দুটি কম্পানি ভ্যাকসিন উৎপাদনের ইউনিট স্থাপনে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিলেও তাতে আরো সময় লাগবে। তৈরি ছাড়াও কয়েকটি দেশীয় কম্পানি কমপক্ষে পাঁচটি রেডিমেইড ভ্যাকসিন আমদানির জন্য নিজেদের মতো করে যোগাযোগ রক্ষা করছে। আমেরিকার মডার্না, জার্মানির ফাইজার, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও ইম্পেরিয়াল এবং রাশিয়ার ভ্যাকসিন আমদানির চিন্তা-ভাবনা করছে কম্পানিগুলো।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক চুক্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সেগুলো কিভাবে দেশে আসবে সে জন্য আগাম পরিবহন ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে কম্পানিগুলো। পাশাপাশি সরকারি তহবিল থেকে যে ভ্যাকসিন কিনে আনা হবে তা নিয়ে কাজ চলছে। কোন ভ্যাকসিনের জন্য কী পরিমাণ টাকা ব্যয় হবে তার হিসাব-নিকাশ চলছে, কবে নাগাদ কোথায় টাকা পাঠানো হবে, তার প্রস্তুতিও আছে সরকারের।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রস্তুতি অনুসারে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ভ্যাকসিন ইউনিটে প্রতি মাসে সিঙ্গেল ডোজের ৮০ লাখ ও পপুলার ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করা যাবে। তবে যদি মাল্টিপল ডোজের কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে প্রতি অ্যাম্পুলে যত ডোজ থাকবে ততগুণ বেশি ডোজ তৈরির হিসাব হবে। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ভ্যাকসিন ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, চীনের সিনোভ্যাক উৎপাদনের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। এর সঙ্গে তারা মডার্নাসহ আরো একটি কম্পানির ভ্যাকসিন আমদানি ও বাজারজাতের জন্য যোগাযোগ রক্ষা করছে।
এদিকে দেশে চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে আইসিডিডিআরবি। এখন অপেক্ষা—চীন থেকে নমুনা ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছানোর। বাকি কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।
আইসিডিডিআরবির ভ্যাকসিন ইউনিটের বিজ্ঞানী ড. কে এম জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা হাসপাতালগুলোতে ট্রায়ালের আনুষঙ্গিক কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছি। আজই (গতকাল) চীনে যোগাযোগ করেছি, তারা জানিয়েছে সেখানকার কাস্টমসের প্রক্রিয়ার জন্য কিছুটা দেরি হচ্ছে। ওই প্রক্রিয়া ঠিক হয়ে গেলেই চীন থেকে পাঠানো হবে। দু-এক দিনের মধ্যে না হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই এসে যাবে।
এদিকে স্বাস্থ্যসেবা সচিব মো. আব্দুল মান্নান গত বুধবার কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের কোভেক্সিন নামের করোনা ভ্যাকসিনের বাংলাদেশে ট্রায়ালের ব্যাপারে আবেদন এসে মন্ত্রণালয়ে। বিষয়টি এখন পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে সরকারিভাবে দেশে আমদানি করা ভ্যাকসিন প্রয়োগে মাঠপর্যায়ে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) ডা. শামসুল হক। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সরকারিভাবে আমদানীকৃত করোনার ভ্যাকসিন চলমান জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমের আদলেই প্রয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কোন বয়সীদের জন্য টিকা আসবে সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে তৈরি হওয়ার কোভেক্স ফোরামের আওতায় বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত ভ্যাকসিন ইউনিসেফের মাধ্যমে দেশে আসবে বলে ইউনিসেফ নিশ্চিত করেছে। ফলে কাজ অনেকটাই সহজ হবে।
এদিকে দেশীয় আরেক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে প্রাণীর ওপর পরীক্ষামূলক ধাপ প্রায় শেষপর্যায়ে এসেছে বলে জানিয়েছে গ্লোব বায়োটেকের গবেষক ড. আসিফ মাহমুদ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন প্রাণীর ওপর প্রয়োগের ফলাফল পর্যালোচনা চলছে। এটা শেষ হলে আমরা আগামী সপ্তাহেই প্রেস কনফারেন্স করে ফলাফল জানাব। এর পরই আমরা মানুষের শরীরে প্রয়োগের জন্য নিয়ম অনুসারে বিএমআরসির কাছে প্রটোকল জমা দেব। সেই প্রটোকল বিশ্বের অন্যসব প্রতিষ্ঠানের প্রটোকল মেনেই তৈরি করা হচ্ছে। আমরা একটি খসড়া বিএমআরসিকে দেখিয়েছি, তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছে, সেটাও আমরা সংযোজন করছি।’
Discussion about this post