বিশেষ প্রতিবেদক
মহামারি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম সচল রাখতে সংসদ টিভি ও রেডিওতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। নানা জটিলতা আর সমস্যার কারণে এসব জায়গায় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত থাকায় এবার শিক্ষা টিভি চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
দেশে করেনো সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম সচল রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে সংসদ টিভি ও রেডিও। সরকারি এই দুই গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালু থাকলেও এতে নানা ধরনের অনুষ্ঠান থাকা ও সব জায়গায় এই দুই গণমাধ্যম না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্নিত ও বাধা হয়ে যাচ্ছে। ফলে এই কার্যক্রমের বাহিরে থাকতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে।
তাই সরকার এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য চালু করতে যাচ্ছে ‘শিক্ষা টিভি’। এ টিভির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রচার করা হবে। এজন্য বিটিভির মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় করণীয় নির্ধারণ করতে গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে শিক্ষা টিভি চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজিদের কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সংসদ টিভিতে প্রাথমিকের রেকর্ডিং ক্লাস চালু করা হলেও এই ক্লাসের বাহিরে ৪০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী। বিশ্বব্যাংক দুই হাজারের বেশি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ফোনে সাক্ষাৎকার নিয়ে এই জরিপটি করেছে। জরিপে বলা হয়েছে, মাত্র ২১ ভাগ শিক্ষার্থী সরকারিভাবে অনলাইন ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পেরেছে। আর বাকি ৭৯ ভাগ এই ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে। অনেক শিক্ষার্থীদের বাসায় টিভি নেই। থাকলেও আবার লোডশেডিংয়ের কারণে সংসদ টিভির পাঠদানের বাইরে রয়েছে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী। সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সময়ে সংসদ টিভিতে ক্লাস এক ঘণ্টা কম সম্প্রচার হয়। এসব সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের তিন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেন।
সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহাবুব হোসেন সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হলেও এর বাহিরে অধিকাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে তা তুলে ধরেন। তিনি সভায় জানান, পাঠদানের জন্য প্রচুর কন্টেন্ট তৈরি আছে। টিভিতে পাঠদান ছাড়াও শিক্ষামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য স্থায়ীভাবে ‘শিক্ষা টিভি’ চালুর প্রস্তাব করেন সচিব। তার প্রস্তাবে বিটিভির ডিজি এম হারুন-অর-রশীদ জানান, বিটিভি ও সংসদ টিভির জন্য বরাদ্দকৃত ফ্রিকোয়েন্সি দিয়েই শিক্ষা টিভি চালু করা সম্ভব।
এসময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংসদ টিভির ফ্রিকোয়েন্সি না পাওয়ায় বিষয়টি তুলে ধরেন। এ সমস্যা ১৫ দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সমাধান করা যাবে বলে জানান বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম। সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে শিক্ষা টিভি চালুর সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে বিটিভির ডিজির নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
কমিটির সদস্য ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, আমরা মিটিং করে একটি প্রস্তাব দিয়েছি। তাতে আমাদের চাহিদা কি? সারা দিনে আমরা কয় ঘণ্টা কন্টেন্ট দিব। সারা বছর কি ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে তুলে ধরেছি। প্রাথমিকের পক্ষে আমি, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি ডিজিরা সবাই মিলে চাহিদা দিয়েছি। পরে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আরেকটি সভা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সে সভায় অংশ নিতে পারিনি। বিশেষজ্ঞরা ঠিক করছেন শিক্ষা টিভি করতে গেলে কী কী দরকার হবে। সরকার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিটিভির নিয়ন্ত্রণেই থাকবে শিক্ষা টিভি। এ টিভির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রাথমিক পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, ভালো নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে না পাঠিয়ে বরং ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ক্লাস টেলিভিশনে প্রচার করতে একটি ‘শিক্ষা টিভি’ করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে
Discussion about this post