বিশেষ প্রতিবেদক
চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শিক্ষার্থীদের একাউন্ট খোলার হার ও আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রান্তিকে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম বেড়েছে ২.২১ শতাংশ।ছেলে-মেয়েদেরকে অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সমন্বয় করার মনোভাব ও অভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে চালু করা হয় স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রমটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী ১০০ টাকা সঞ্চয়ের মাধ্যমে একটি একাউন্ট খুলতে পারবে। একাউন্ট খোলার সময় শিক্ষার্থীর বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয়, তাহলে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট, প্রাতিষ্ঠানিক প্রশংসাপত্রের ফটোকপি, সর্বশেষ স্কুল ফি জমা দেওয়ার রশিদ ব্যাংকে জমা দিয়ে একাউন্ট খুলতে পারবে। এরজন্য কোন চার্জ ফি দিতে হয় না। সমস্ত কাগজ ব্যাংকে সংরক্ষণ থাকবে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শিক্ষার্থীদের একাউন্ট খোলার হার ও আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রান্তিকে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম বেড়েছে ২.২১ শতাংশ। আর এক লাখ দুই হাজারের বেশি নতুন স্কুল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলা হয়েছে।
জুনের শেষে মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৩১ হাজার ৬০২টিতে। এর মধ্যে ৬০ দশমিক ৮২ শতাংশ হিসাব শহরাঞ্চলে। আর ৩৯ দশমিক ১৮ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে খোলা হয়েছে। আকর্ষণীয় সুদ হার, ডেবিট কার্ডের সুবিধা এবং আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচিসহ এই অ্যাকাউন্টে অন্যান্য আরও অনেক সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে।
দেশে চালু থাকা ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে প্রায় ৫৫টিতে একাউন্ট খুলতে পারছে শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারির মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ফি দিতে পারছে। যাদের স্কুল ব্যাংকিং হিসাব নেই তাদের কাছেও এখনই অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশে ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে নতুন একাউন্ড গ্রামাঞ্চলে ছয় দশমিক শূন্য চার শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে বেড়েছে তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর মোট স্কুল ব্যাংকিং একাউন্টের ৫৬ দশমিক ৭১ শতাংশ ছেলে এবং ৪৩ দশমিক ২৯ শতাংশ মেয়েদের।
এছাড়া জুন পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ দুই দশমিক ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। গত মার্চে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এসময় চার দশমিক ৪০ শতাংশ আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে কোভিড-১৯ মহামারি কারণে জুনের তুলনায় অন্যান্য মাসে একাউন্ট খোলা ও আমানতের হার কমেছে বলে মনে করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। করোনাভাইরাসের কারণে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে সব ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় বৃদ্ধি করেছে সরকার।
তবে এসময়ে বছরভিত্তিক হিসাবে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা ২১ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং আমানতের পরিমাণ ২৬৮ দশমিক ৪২ কোটি বা ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়েছে। স্কুল ব্যাংকিং হিসাব এবং আমানতের বেশি অংশ রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয়।
মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৬৯ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ হিসাব খোলা হয়েছে। আর আমানতের ৮৩ দশমিক ১৭ শতাংশ একাউন্টগুলোয় জমা রয়েছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং হিসাব পরিচালনায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ব্যাংকটিতে রয়েছে মোট হিসাবের ২১ দশমিক ৩২ শতাংশ। ব্যাংকের পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৩টি হিসাবে ৫১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা জমা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি উন্নত করা, অর্থ সঞ্চয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং সঞ্চয়ের মনোভাব ও সঞ্চয়ের উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তিন লক্ষ্যকে সামনে রেখে শুরু হয় স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম।
উল্লেখ্য ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করার জন্য সকল তফসিলি ব্যাংককে পরামর্শ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম নীতিমালা তৈরি করে। সেই নীতিমালা অনুসারে কার্যকর রয়েছে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম।
Discussion about this post