শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। পাঁচ ভাইবোনের মাঝে শেখ হাসিনা সবার বড়। তার তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং ছোট্ট শেখ রাসেল, আর বোন শেখ রেহানা। ১৯৬৮ সালে তিনি বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজন সুযোগ্য সন্তানের জননী। তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১, ২০৩০, ২০৪১ ও শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে ও ডিজিটাল তথা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্থপতি হিসেবে কাজ করছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। কন্যা সায়মা ওয়াজেদ মানসিক স্বাস্থ্য এবং অটিজম নিয়ে কাজ করছেন। তিনি World Health Organization-এর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ২৫ সংখ্যা বিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের একজন সদস্য। তারাও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করতে এখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী হবার পর পরই তিনি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে শান্তি চুক্তি এবং ১৯৯৮ সালের জুনে বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গুরুত্ব আরোপ করার পাশাপাশি এই সময়টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন, হরতাল এবং সংসদ অধিবেশন বয়কট করে নানাভাবে সরকারি কার্যক্রমে বাধা প্রদান করেছে। এরপরও শেখ হাসিনার সরকার পাঁচ বছরের পূর্ণ সময়কালের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে ২০০১ সালের পাতানো নির্বাচনে শেখ হাসিনা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ হন। বিএনপি ক্ষমতা লাভ করে। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী নেতাগণ সেই নির্বাচনের ফলাফলের বিরোধিতাও করেন, কারণ সে নির্বাচন নিরপেক্ষ ছিল না। এর মাঝেও আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনা এক নির্মম গ্রেনেড হামলার শিকার হন এবং ভাগ্যক্রমে খুব বড় ক্ষতি থেকে বেঁচে যান। তবে তার দলের বহু মানুষ এতে গুরুতরভাবে আহত হন এবং ২৪ জন নিষ্ঠাবান দলীয় সদস্য মৃত্যুবরণ করেন। সেই হত্যাকাণ্ডের নির্মমতা খুবই অবিশ্বাস্য ছিল। কারণ স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে কোনও রাজনৈতিক সমাবেশে এভাবে আক্রমণ চালানো ছিল একটি ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ। পরবর্তীতে একটি সামরিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপে সকল সংসদীয় নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের জুন মাসে মুক্তি লাভ করেন। সেই বছরের ২৯ ডিসেম্বর আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার শেখ হাসিনা মহাজোট এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে একজোট হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯-এর জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এবার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার সরকারের শাসনামল চলে ২০১৪ পর্যন্ত। ২০১৪ সালে আবার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং এখনও তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব খুব সুচারুরূপে পালন করে যাচ্ছেন। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা অদম্য বাংলাদেশের কাণ্ডারি তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক Irina Bokava ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার লাভ করেন ২০১৪ সালে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রায় ১১,১৮,৫৭৬ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। মিয়ানমার সরকার দ্বারা নির্মমভাবে বিতাড়িত এসব অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শুধুমাত্র আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পেরেছেন একটু নিরাপদ আবাস দিতে। এ কারণেই একটি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যানেল ‘channel 4’ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘Mother of the Humanity’ খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়া ‘Agent of Change Award’ , ‘Planet 50-50 Champion by UN Women’ এবং আরও কিছু উল্লেখযোগ্য খেতাব তিনি পেয়েছেন, যার মাঝে উল্লেখযোগ্য খেতাব হচ্ছে বিশ্বের ৫৯তম ক্ষমতাধর নারীর খেতাব। ২০১৫ সালের ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য মতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ ক্ষমতাধর নারীর মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান ৫৯তম। তার লিখিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে ‘Democracy in Distress Demanded Humanity’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘The Quest For Vision-2021’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’ ইত্যাদি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন থেকে একটা বিষয়ই পরিলক্ষিত হয় তা হলো জীবনে সাফল্যের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করে জিততে হয়। তার জীবনে অনেক বড় বড় আঘাত এসেছে, কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি। আজ বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা আছেন যিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে প্রতিনিয়ত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সুসম্পর্ক ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির সকল আশা-ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর শুভ জন্মদিনে আমাদের প্রার্থনা তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেন এবং বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।
লেখক: অধ্যাপক; তথ্যপ্রযুক্তিবিদ; সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)
Discussion about this post