নিউজ ডেস্ক
প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় আনা হয় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তাকে আনা হয়েছিল স্ট্রেচারে শুইয়ে। তবে এক মাসের চিকিৎসায় তিনি আজ বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দুপুরে সেই হাসপাতাল ছেড়েছেন পায়ে হেঁটে।
তার চিকিৎসকরা বলছেন, ওয়াহিদার ডান হাত ডান পায়ের শক্তি ফিরে এসেছে। যদিও শতভাগ শক্তি ফেরা সময় ও চিকিৎসা সাপেক্ষ। সেজন্য তাকে মিরপুরের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হবে। ফিজিওথেরাপিতে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
তিনি বলেন, অপারেশনের পর প্রথমে তার ব্রেন ঠিক মতো কাজ করছিলো না। প্রেসার ঠিক ছিল না। তবে দুই-তিন দিনের মধ্যে তিনি একটু সুস্থ হলেও ডানপাশ কোনোভাবেই কাজ করছিল না। শরীরের ডান পাশে তার পাওয়ার (শক্তি) শূন্য ছিল।
‘এক সপ্তাহ পর থেকে তিনি আস্তে আস্তে সুস্থ হতে শুরু করেন। শরীরের ডানপাশটা নাড়াতে শুরু করেন। এরপর বিগত প্রায় তিন সপ্তাহের চিকিৎসায় আল্লাহর রহমতে তিনি এখন ডানপাশ পুরোটাই নাড়াতে পারছেন এবং হাঁটতে পারছেন। একটু আগে তিনি হেঁটে অ্যাম্বুলেন্সে উঠে গেছেন। এখানে তার অপারেশনটা একশভাগ সাকসেসফুল হয়েছে বলে আমরা বলতে পারি।’
‘আমরা আগেও বলেছি, শুরুতে তার ব্রেইন ড্যামেজ ছিল। মাথার খুলির হাড্ডি ভেঙে ব্রেনের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল। সেটা আমরা অপারেশন করে তুলে দিয়েছি। যে কারণে তার ব্রেনে ড্যামেজ হয়েছিল, যেটা আমরা বলি কনটিউশন। ব্রেনের ড্যামেজটা রিকভার হয়ে গেছে। তিনি এখন হাঁটতে পারছেন।’
ডা. জাহেদ বলেন, তার শারীরিক রিকভারির যা অবস্থা, তাতে আশা করা যায় ২-১ সপ্তাহের মধ্যে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার ডিজ্যাবিলিটি থাকবে না ইনশাল্লাহ। আমরা তাকে এক মাস পর ফলোআপে আসতে বলেছি। শুরুতে স্ট্রেচারে শুয়ে হাসপাতালে তিনি এসেছিলেন, তার পালস, ব্লাড প্রেসার, জ্ঞানের মাত্রা স্বাভাবিক ছিল না। আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ, সুস্থ হয়ে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছেন। এটা আমাদের গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট এবং তার জন্য এটা একটা বিরাট সাফল্য বলতে পারি। যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন হয়েছিল, যেখান থেকে তিনি রিকভার করেছেন।
‘তার মানসিক ট্রমা কাটানোর জন্য আমরা তাকে সার্বক্ষণিক ফিজিওথেরাপি এবং মানসিকভাবে বুষ্টআপ করার চেষ্টা করেছি। বাকি যতোটুকু দরকার তা সিরিআপি করবে। আজকে তাকে আমরা ছাড়পত্র দিলাম, যদিও তাকে হাঁটার অনুমতিও আমরা দেইনি। তার জন্য আর কোনো অপারেশন ব্যবস্থা নেই, যেটা আমরা করবো। রিকভারিটা এখন অপারেশন ছাড়াই হবে। শতভাগ রিকভারি হবে কি-না, সেটা আমরা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। ওয়াহিদার সাথে সাথে তার বাবাকেও আমরা সিআরপিতে পাঠিয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহেদ বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে তিনি নরমাল বা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন এবং কর্মস্থলেও ফিরতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি।
গত ২ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। ভেতরে ঢুকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর জখম করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকেও (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুরে এবং পরে রংপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হয়। তারপর থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওয়াহিদা।
Discussion about this post