নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। করোনার ফলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অভিভাবকরা। নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলে প্রণীত পাঠ-পরিকল্পনা অনুযায়ী লেখাপড়া ও বার্ষিক পরীক্ষা, না হলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে ‘অটোপাস’। আগের বছরের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে রোল নম্বর। করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললেই এসব পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি। করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং নভেম্বরে বা এরপর সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার কাজে সরকার বেশি তৎপর।
তাই নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান। যদি খুলে দেয়া হয় তবে ইতোমধ্যে প্রণীত পাঠ-পরিকল্পনা অনুযায়ী লেখাপড়া ও বার্ষিক পরীক্ষা নেব। আর যদি খুলে দেয়া সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে ‘অটোপাস’-এর কোনো বিকল্প দেখছি না। কেননা, মূল্যায়নের নামে আমরা শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।
গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। মাঝে কয়েক দফা ছুটি বাড়ানো হয়েছে। মার্চের শেষে মাধ্যমিকে এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রাথমিক স্তরে টেলিভিশন পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ শতাংশের কাছে সংসদ টেলিভিশনের পাঠদান পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। আর মাউশির হিসাবে প্রায় ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এসেছে এই পাঠদানের আওতায়।
প্রাথমিক স্তরে সারা দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। ৩৫ শতাংশ পাঠদানের বাইরে থাকলে এর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় অর্ধকোটি। আর মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ। মাউশির হিসাবে, যেসব জায়গায় টিভির পাঠদান পৌঁছানো যায়নি তার সংখ্যা সাড়ে ১০ লাখ (শিক্ষার্থী)।
প্রসঙ্গত, ২৭ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্ষিক পরীক্ষা না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যা কিছু করছি সব তোমাদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। এখন করোনাকাল চলছে। তোমরা স্কুলে যেতে পারছ না। পরীক্ষা তো হবে না, হয়তো প্রমোশন দিতে হবে। আমরা দেখছি কী করা যায়।’
করোনার প্রভাবে শ্রেণিকক্ষে এ বছর পাঠদান না হওয়ার শঙ্কা আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ছেলেমেয়েদের ঝুঁকিতে ফেলতে চাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ জানান, বর্তমানে স্কুল খোলা বা পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। এজন্য শিক্ষার্থীরা বর্তমানে যে ক্লাসে আছে, তার আগের ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন করে পরের ক্লাসে তুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, পরীক্ষা নিতে না পারলে নতুন ক্লাসে ভর্তি যে আগে হবে তার রোল আগে থাকবে- এই নীতি নেয়া যায়। তবে পরের শ্রেণিতে পদোন্নতিতে আগের বছরের বা ২০১৯ সালের বার্ষিক পরীক্ষার ফল বিবেচনা নিলে বিতর্ক না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে কী হবে সেটা আরও পরে জানানো হবে। এখনও সময় আছে।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে চলতি বছরের পিইসি, ইইসি, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে ফল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
Discussion about this post