এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।এই সিদ্ধান্ত অধিকাংশ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কিন্তু জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করেই এইচএসসির ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সকল স্তরের মানুষের মধ্যে।
এভাবে ফলাফল মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে এবং এমন সিদ্ধান্ত কতটা শিক্ষার্থীবান্ধব ও যুক্তিপূর্ণ তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। প্রধানত জেএসসি ও এসএসসি স্তরের পড়াশোনার ফলাফল দিয়ে এইচএসসি স্তরের পড়াশোনা যাচাই করা পুরোপুরিভাবে সম্ভব নয়। এইচএসসি স্তরের ফলাফল নির্ধারণ করে দেয় একজন শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গতিপথ।
অন্যদিকে, এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এসএসসি ও এইচএসসি স্তরে ভিন্ন বিভাগে পড়াশোনা করেছে। সেক্ষেত্রে, যারা এইচএসসিতে বিভাগ পরিবর্তন করেছে তাদের মেধার যথাযথ মূল্যায়নের সুযোগ নেই। আবার, এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে। বাংলাদেশে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় যে কোনো শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা আছে কি না।
আর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলও নির্ভর করে এই দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ওপর। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটগুলোতে, ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেলে পড়তে চাইলে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মত কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ন্যুনতম গ্রেড প্রয়োজন হয়। তাই পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি ও এসএসসি’র ফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসি’র ফলাফল দেয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে জটিলতা তৈরির সম্ভাবনা থাকে। দু’বছর শিক্ষার্থীরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে তৈরি করেছে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা মাধ্যমিকের থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফলাফল অর্জন করতে চায়।
অতীতে দেখা যায়, অনেকে ভালো ফল অর্জন করেও! যদি এসএসসি/ সমমান এবং জেএসসি/ সমমানের ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশিত হয় তাহলে বিগত দুবছরের বেশী সময় শিক্ষার্থীরা যে পরিশ্রম করেছে তা কোনোভাবেই মূল্যায়িত হবে না ! তাই, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনায় আনা জরুরি! কেননা নির্বাচনী পরীক্ষার ফলের সাথে যেহেতু পরিক্ষার্থীর চুড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সম্পর্ক থাকে। পরীক্ষার্থীরা এই পরীক্ষাটিকে গুরুত্বের সাথে নেয়।
নির্বাচনী পরীক্ষার ফল দেখেই অনুমান করা যায় সে চুড়ান্ত পরীক্ষায় কেমন করবে।নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও হয় বোর্ড পরীক্ষার অনুরুপ। এক কথায় এই পরীক্ষা চুড়ান্ত বোর্ড পরীক্ষার একটি ছায়া মূল্যায়ন। সুতরাং এই পরীক্ষার একটি আইনি ভিত্তি আছে। শিক্ষা মন্ত্রনালয় চাইলেই দেশের সকল শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট সংগ্রহ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে এইচএসসি/সমমানের নির্বাচনী পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে জিপিএ ৫ এর মধ্যে ৩ নিয়ে এবং এসএসসিতে অর্জিত রেজাল্ট এর ভিত্তিতে জিপিএ ৫ এর মধ্যে ২ নেয়া যেতে পারে। এভাবে সমন্বয় করে ফলাফল প্রকাশ করলে শিক্ষার্থীদের উপর সুবিচার করা হবে। এই ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থীও “ ওহ!২০২০ ব্যাচ!”- এমন আজীবন গঞ্জনা থেকে রেহাই পাবে।
Discussion about this post