বিশেষ প্রতিবেদক
প্রতিবছর জুলাই মাস থেকে কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় বদলে গেছে শিক্ষা ক্যালেন্ডার। তিন মাস দেরিতে হলেও গত ৩ অক্টোবর একাদশ শ্রেণিতে নতুন ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অথচ মফস্বলের কলেজগুলো বা শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে তেমন কোনো প্রস্তুতিই নেই। আবার মফস্বলের যেসব শিক্ষার্থী রাজধানীর কলেজগুলোতে ভর্তি হয়েছে, তাদেরও গ্রামে বসে অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ নেই।
করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের সব কলেজে গত ৪ অক্টোবর থেকে অনলাইনে একাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এতে মফস্বল এলাকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ একেবারে হাতেগোনা।দ্বীপাঞ্চল ও চরাঞ্চলের শিক্ষার্থ ীরা জনায়,‘৪ অক্টোবর থেকে অনলাইনে একাদশের ক্লাস শুরু হলেও আমরা এখন পর্যন্ত ক্লাস করতে পারিনি। অথচ শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। এতে করে আমরা পিছিয়ে পড়ে যাচ্ছি।’
শুধু এরাই নয়, করোনাকালে মফস্বল এলাকার একাদশের অনলাইনে ক্লাসের চিত্রটি কমবেশি এমনই। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত মফস্বল এলাকার অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরিবাবে স্মার্টফোন নেই। এছাড়াও নিয়মিত বিদ্যুৎ না থাকায় একটা বড় অংশের অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।এলাকার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। কখনো কখনো ক্লাসে জয়েনই করতে পারছেনা। আবার ক্লাসে জয়েন করতে পারলেও সাউন্ড সিস্টেম ক্লিয়ার থাকে না। অনলাইন ক্লাস করতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আবার অনেক কলেজে এখনও অনলাই ক্লাস শুরু করতে পারেনি।
এদিকে শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইনে ক্লাস হলেও মফস্বলের কলেজেগুলোয় তেমনভাবে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না। কিছু কিছু প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিউশন ফি আদায় করতে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানতে অনেকটা নামকাওয়াস্তে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে অনেকটা পিছিয়ে। মফস্বলের নেটওয়ার্ক কাঠামো খুব দুর্বল থাকায় পূর্বে রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেইজে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস আপলোড দেওয়া হলেও তেমন কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
অনলাইন ক্লাসে মফস্বলের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের স্মার্টফোন বা অনলাইন ক্লাসের জন্য অন্য কোনো ডিভাইস না থাকায় ক্লাস করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। যার ফলে প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার ইন্টারনেটের উচ্চদাম ও গতি দুর্বল থাকায় অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া মফস্বলের শিক্ষকরাও তথ্য-প্রযুক্তিতে খুব একটা দক্ষ নয়। এমনকি অনেক শিক্ষকেরই স্মার্টফোনও নেই। যার ফলে মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমান অনলাইন ক্লাস অনেকটা নির্দেশনার মধ্যেই বন্দি হয়ে আছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই ছুটি আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মার্চ মাস থেকেই সংসদ টেলিভিশনে মাধ্যমিকের ক্লাস এবং এপ্রিল মাস থেকে প্রাথমিকের ক্লাস প্রচার করা হচ্ছে। মূলত মে মাস থেকেই শহরাঞ্চলের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ক্লাস শুরু করে, কিন্তু শহরাঞ্চলের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও তাদের কেউ কেউ আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করে। ফলে এখনো বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসের বাইরে রয়ে গেছে। অবশ্য টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রাথমিক-মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচার করা হলেও সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের খুব একটা আগ্রহ নেই।
এ প্রসংগে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘কত ভাগ শিক্ষার্থীকে এই পাঠদান সুবিধা দিতে পারছি তার কোন ধারণা আমার জানা নেই। তবে করোনার প্রভাবে ঝিমিয়ে পড়া শিক্ষাব্যবস্থা এই কার্যক্রম নিঃসন্দেহে কিছুটা হলেও গতিশীল করবে। আর যেহেতু এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, তাই একাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইনে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাদের পক্ষে সম্ভব হবে, তারাই অনলাইনের এই ক্লাস করবে। তবে আমি সব কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব, তারা যেন ক্লাসগুলো ইউটিউব বা ওয়েবসাইটে আপলোড করে, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনমতো সময়ে ক্লাসগুলো দেখতে পারে।’
সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া একাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইনে চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাদের পক্ষে সম্ভব হবে, তারাই এ কার্যক্রমে অংশ নেবেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে এসব ক্লাসের লেকচারগুলো ইউটিউব বা ওয়েবসাইটে আপলোড করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
Discussion about this post