নিউজ ডেস্ক
করোনা মহামারীর কারণে ৮ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে আবারও চালু হয়েছে ওমরাহ।
বাংলাদেশি নাগরিকদের ওমরাহর বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। শিগগিরই এ বিষয়ে ইতিবাচক ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বুধবার ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহী বৈধ এজেন্সি মালিকদের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলেছে সরকার। এদিকে ওমরাহ কার্যক্রমে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ কঠোর শর্ত আরোপের ফলে খরচ আগের তুলনায় দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া নির্ধারণ, সৌদি আরবে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী হোটেল ভাড়া এবং ৩ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন ও খাবারসহ নানা কারণে খরচ বাড়বে। মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে একবার ওমরাহ পালন ও নামাজের সুযোগ পাবেন এবং তাদের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে স্মার্টফোন রাখতে হবে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ওমরাহ চালুর বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মু. আ. হামিদ জমাদ্দার। তিনি বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে ইতিবাচক ঘোষণা আসবে। ওমরাহ চালু হলে খরচ অবশ্যই বাড়বে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে সৌদি সরকারের ওপর।
জানা গেছে, করোনা মহামারীর আগে বাংলাদেশের যে কোনো বয়সের মানুষ ওমরাহ পালন করতে যেতে পারতেন। ১৪ দিনের প্যাকেজে কমবেশি ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ওমরাহ পালন করা যেত। একজন যাত্রী সৌদি আরবে গিয়ে একাধিকবার ওমরাহ করতেন।
তবে এখন আগের সেই সুযোগ আর থাকছে না। আগের মতো সব বয়সের মানুষ এখন ওমরাহ পালন করতে যেতে পারবেন না। বর্তমানে শুধু ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সীরাই ওমরাহ পালনে যেতে পারবেন।
একসঙ্গে ৫০ জনের গ্রুপ করে যেতে হবে। সৌদি আরবে গিয়েই তাদের ৩ দিন অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টা কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। নির্দিষ্ট অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করেই ওমরাহ পালনের অনুমতি দেয়া হবে। হোটেলের এক রুমে দু’জনের বেশি ওমরাহ যাত্রী রাখা যাবে না। ওমরাহ প্যাকেজের আওতায় খাবারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম. শাহাদত হোসাইন তসলিম যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের ওমরাহ যাত্রীদের বিষয়ে এখনও সৌদি সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমরা আশা করছি। করোনার পরে ওমরাহ করার বিষয়ে কঠিন শর্ত আরোপ করতে যাচ্ছে সৌদি সরকার। সে কারণে খরচ আগের তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে বিমান ভাড়া ও সৌদি আরবে হোটেল ভাড়ার ওপর।
ওমরাহর শর্তগুলোর বিষয়ে ধারণা দিয়ে হাব সভাপতি বলেন, প্রত্যেক ওমরাহ যাত্রীকে প্রথমেই করোনা নেগেটিভ সনদ নিতে হবে। সবার কাছে স্মার্টফোন থাকতে হবে। ওমরাহর জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপস ডাউনলোড করতে হবে। ওই অ্যাপসের মাধ্যমে তাকে ওমরাহ করার সুযোগ দেবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। হোটেলে গিয়েই ৩ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। প্রত্যেকে মাত্র একবারই ৩ ঘণ্টার জন্য ওমরাহ করার সুযোগ পাবেন। হেরেম শরিফে ওই সময়ই শুধু নামাজ পড়ার সুযোগ পাবেন। আগের মতো স্বাধীনভাবে চলাফেরা বা শপিং করার কোনো সুযোগ থাকবে না। এমনকি হোটেলের নিচে নামতে হলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। মোট কথা সৌদি সরকারের দেয়া শর্ত মেনে বাধ্যগত ছাত্রের মতো ওমরাহ পালন করতে হবে।
এজেন্সির মালিকরা বলছেন, এসব শর্ত মেনে ও আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে ওমরাহ পালনে মানুষ আগ্রহী হবেন না। কমে যাবে ওমরাহ যাত্রী। এ প্রসঙ্গে হাবের বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও আল কুতুব হজ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মাওলানা হাবীবুল্লাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন বলেন, ওমরাহ যাত্রীদের যাতায়াত ও কার্যক্রম কঠোরভাবে সৌদি সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে ওমরাহর খরচও যেমন বাড়বে, আইন-কানুনের গ্যাঁড়াকলে যাত্রীও কমবে। ওমরাহ যেহেতু ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করেই সৌদি সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজধানীর বিজয়নগর এলাকার এক এজেন্সি মালিক বলেন, আগে হোটেলের একটি কক্ষে ওমরাহ হজ পালন করতে যাওয়া ৪ যাত্রীকে রাখা যেত। তাছাড়া মানুষ নিজেদের ইচ্ছেমতো সীমিত টাকায় খাবার খেতে পারতেন। কিন্তু শর্তারোপের ফলে তা সম্ভব হবে না। এছাড়া বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে সৌদি রুটে সীমিত সংখ্যক ফ্লাইট চলাচলের কারণে টিকিটের দাম আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
Discussion about this post