বিশেষ প্রতিবেদক
মাধ্যমিক (এসএসসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে আসছে ডিসেম্বরের মধেই এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জটিলতা দেখা দিয়েছে বিভাগ পরিবর্তন করা শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ নিয়ে।
ফল প্রকাশে উদ্ভূত জটিলতা নিরসনে বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিনিয়ত বসে সেগুলোর যৌক্তিক সমাধানও বের করছেন। চলতি মাসের মধ্যেই বিভাগ পরিবর্তনজনিত গাইডলাইনের কাজ শেষ হবে।
যারা এসএসসিতে এক বিভাগে পড়েছিল, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে বিভাগ পরিবর্তন করেছে, তাদের ফল নিয়েই সবচেয়ে বড় সমস্যা। কেউ হয়তো এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছিল, কিন্তু এইচএসসিতে মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পড়েছে। বিভাগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি বাধ্যতামূলক বিষয় ছাড়া বাকি পাঠ্য বিষয়গুলো পরিবর্তন হয়।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেও অনেকে সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে এইচএসসিতে পড়ে, যাদের বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। আবার কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আছে, যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে সমতুল্য সনদ নিয়ে এইচএসসিতে পড়ে।
বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, বিভাগ পরিবর্তনজনিত জটিলতা নিরসনে এখন জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির বিষয়গুলোকে ‘ম্যাপিং’ করা হচ্ছে। যেসব বিষয়ের মধ্যে মিল আছে, সেগুলোর জন্য এক ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যেগুলোর মিল নেই, সেগুলোর জন্য অন্য ব্যবস্থা হবে। যেমন—মানবিকের বিষয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, সমাজকল্যাণ, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির মতো বিষয়গুলোকে সমগোত্রীয় ধরা হচ্ছে। আবার এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী যাদের পদার্থ, রসায়নের মতো বিষয় ছিল কিন্তু এইচএসসিতে তারা মানবিকে চলে গেছে। ফলে এসব বিষয়ের সঙ্গে অর্থনীতির মতো বিষয়কে সমগোত্রীয় হিসেবে বিবেচনা করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এভাবে সমগোত্রীয় বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
বিভাগ পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যসচিব ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা এখন বিষয় ম্যাচিংয়ের কাজগুলো করছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ফলগুলোও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আশা করছি, চলতি মাসের বিভাগ পরিবর্তনজনিত গাইডলাইনের কাজ শেষ করতে পারব। ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করব।’
যারা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছিল, তাদের সংখ্যা এক লাখ ৩৪ হাজার ১৩৬ জন। এর মধ্যে মাত্র ১১ হাজার শিক্ষার্থীর জেএসসি বা জেডিসির সনদ আছে। ফলে তাদের মূল্যায়ন নিয়েও জটিলতা রয়েছে।
এ প্রসংগে বিকল্প পরিকল্পনার কথা জানিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. মোরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমাদের অনেক ছেলে-মেয়েরই জেএসসি নেই। তাই আমরা একাধিক বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। আমাদের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পৃথকভাবে পরীক্ষা দিতে হয়। এমনকি একাদশ শ্রেণির নম্বরপত্রও শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এসএসসি ও একাদশ শ্রেণির ফল মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা এইচএসসির ফল প্রকাশের চিন্তাভাবনা করছি। তবে যাদের জেএসসি আছে তাদের ওই ফলকেও বিবেচনায় আনা হতে পারে। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত মিটিং করছি। নানা ধরনের সমস্যা আমাদের সামনে আসছে। সেগুলোর যৌক্তিক সমাধান আমরা বের করার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো অবস্থাতেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা লক্ষ্য রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।’
এবার এইচএসসি ও সমমানের মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থী। দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। গত বছর এক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন, দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫১ হাজার ৩৪৮ জন এবার পরীক্ষার্থী। নিয়মিত-অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর বাইরে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী রয়েছে তিন হাজার ৩৯০ জন। মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৬ হাজার ৭২৭ জন। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবার কোনো ফেল থাকছে না, সবাই পাস করতে যাচ্ছে।
Discussion about this post