প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিকে বিভাজন না থাকা, পরীক্ষার সময় কমানো ও মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনসহ যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা ইতিবাচক বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ, গবেষক ও শিক্ষকরা। তবে এ শিক্ষাক্রমের সঙ্গে মিলিয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়া না হলে শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মত তাদের।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। যে শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণী পর্যন্ত থাকবেনা কোন বিভাগ বিভাজন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দাবি অনুযায়ী, বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমকে যোগ্যতাভিত্তিক করা হয়েছে। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক জাতি গঠনেও এ শিক্ষাক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য। আর এর শিখন পদ্ধতির মূল ভিত্তি হবে অভিজ্ঞতাভিত্তিক। সাপ্তাহিক দুইদিন ছুটি এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিখন ঘন্টার পাশাপাশি রাখা হয়েছে স্কুলের বাইরের শিখন ঘন্টাও। নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে স্কুলে পরীক্ষার কার্যদিবস কমানোর পাশাপাশি মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হবে মাত্র ৫ দিনেই।
ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিষয় থাকবে ১০ টি। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজী, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ভালো থাকা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজী, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিখনকালীন বা ধারাবাহিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে এবং ৫০ শতাংশ সামষ্টিক বা পরীক্ষার মাধ্যমে। আর বাকি ৫ বিষয়ের শতভাগ মূল্যায়ন হবে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে।
প্রস্তাবিত এ শিক্ষাক্রমকে স্বাগত জানাচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষাবিদ সকলেই। বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মেলাতে এ শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন,পৃথিবী যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞান যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে সেদিকেই আমাদের ঝুঁকতে হবে। আমরা পারবো না বলে যদি পিছিয়ে থাকি তাহলে আরও পিছিয়ে যাবো।
গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবু সাঈদ ভূঁইয়া বলেন, এই শিক্ষাক্রম পূর্বের কারিকুলাম থেকে অনেক আধুনিক এবং যুগোপযুগি। আমাদের যেসব দুর্বলতা আছে সেগুলো পূরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও জোর দিতে হবে।
তবে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বড় যে বাঁধাগুলো রয়েছে, তা দূর করতে আগে থেকেই সচেষ্ট হতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করাটাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদেরকে সেই অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক বানাতে হবে, শিক্ষকদের কমপক্ষে এক বছর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা দেখেছি সৃজনশীল পদ্ধতি অনেক কম থাকা স্বত্ত্বেও অনেক শিক্ষক তা রপ্ত করতে পারেনি।
প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ২০২২ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে।
COURTESY -dbcnews.tv
Discussion about this post