প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ছোটবেলা থেকে রিকশাওয়ালাকে আপনি বলে সম্বোধন করে আসছি। কারণ, আমাদের বাবা-মা সেটাই শিখিয়েছিলেন। প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে এ সমাজের প্রতি। এ কথাটা মনে রাখতে হবে। তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) ১১৬, ১১৭ ও ১১৮তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী এবং সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে দেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় এ গরিব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়িতে চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’
সরকারপ্রধান বলেন, সমাজে যেসব উপসর্গ মাঝেমধ্যে দেখা দেয়, যেমন: নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি- এসবের বিরুদ্ধেও আপনাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে কারও মুখ চেয়ে নয়, যারাই অপরাধী, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখবেন, এটাই আমার কথা। অপরাধী যে দলের হোক বা যে কেউ হোন না কেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা কোর্সের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন। ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া ৫ মাসব্যাপী এবারের কোর্স করোনা বিভ্রাটে পড়ে বিলম্বিত হয়। তবে অনলাইন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটি সমাপ্ত হয়। ১১৬ জন অংশগ্রহণকারীর সবাই কৃতকার্য হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭০ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন মহিলা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী তিনজন শিক্ষার্থীর হাতে রেক্টরস পদক তুলে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে এবং আজ আপনারা যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে যাচ্ছেন আপনারাই কিন্তু তখন একটা উচ্চপর্যায়ে যাবেন। ’৪১ এর কর্ণধার আপনারাই হবেন, বাস্তবায়ন আপনারাই করবেন। কাজেই সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলবেন।
সরকার দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন প্রযুক্তিনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, দেশকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যাতে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে, উন্নত জীবন পেতে পারে। আমরা যেন বিশ্বে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলতে পারি। এজন্যই তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্ক যেমন গড়ে তুলেছি; তেমনি রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ নির্মাণ করে সড়কপথসহ জলপথ, রেলপথ এবং আকাশপথের উন্নতি সাধন করে দেশব্যাপী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি।
‘ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না’- জাতির পিতার এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি কারও কাছে হাতপেতে নয়, নিজেরা যেন চলতে পারি। এমনকি এই করোনার মধ্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জনগণের খাদ্য পুষ্টির চাহিদা পূরণেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জমি সীমিত হলেও গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে আজ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এটা অব্যাহত রাখতে হবে।
সুত্র : বাসস
Discussion about this post