বিশেষ প্রতিবেদক
এখন থেকে মেডিকেল টেকনোলজি এবং নার্সিং কোর্স শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুস্পষ্ট আইনের আওতায় পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে ১৫ বছর ধরে কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত এ কোর্স দুটি বন্ধ হল। একই সঙ্গে নিরসন হল কোর্স দুটি পরিচালনা সংক্রান্ত জটিলতার।
জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ৪ নভেম্বর একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। কারিগরি-২ শাখা থেকে প্রকাশিত ওই গেজেটে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আইন-২০১৮-এর তফসিল-১-এর ক্রমিক নং-১-এর দফা ‘ঞ’ এবং ক্রমিক নং-৪-এর দফা ক, ঘ বিলুপ্ত করা হয়। এছাড়া বোর্ড আইনে ২০১৮-এর ধারা-২৬-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উল্লিখিত দফা সংশোধন করা হয়েছে। ফলে কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স বন্ধ হয়ে গেল। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়েরকারী বেকার অ্যান্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট চার বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি অবিলম্বে ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের রশি টানাটানির অবসান ঘটেছে। তাছাড়া কোর্স দুটি চিকিৎসা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কারিগরি বোর্ডের অধীনে কোর্স করার পর অনেকেই বিষয়গুলো ঠিকভাবে বুঝতে পারে না। এতে রোগ নির্ণয় ও রোগীদের সেবা বাধাগ্রস্ত হতো। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রেও মামলাসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হতো। এই সিদ্ধান্তের কারণে সব ধরনের জটিলতার নিরসন হল।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের কার্যবিধি অনুযায়ী মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং সংক্রান্ত শিক্ষা কার্যক্রম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। ১৯৬২ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স এবং বাংলাদেশ নার্সিং কোর্স পরিচালনা করে আসছে। ২০০৫ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স পরিচালনা শুরু করলে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ১৫ বছর ধরে এ নিয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বান্দ্বিক অবস্থা বিরাজমান ছিল। জটিলতা নিরসনে ২০০৭ সালে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্টের আওতায় পরিচালনার সুপারিশ করে। কিন্তু এ সুপারিশ উপেক্ষা করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কোর্স পরিচালনা অব্যাহত রাখায় জটিলতা বৃদ্ধি পায়।
এ পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতর শূন্য পদের বিপরীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না পাওয়ায় তারা হাইকোর্টে মামলা করেন। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নেয়া হয়। সর্বোচ্চ আদালত ২০১৬ সালের নভেম্বরে ২০০৭ সালে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের আলোকে ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার মধ্যেই ২০১২ সাল থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নার্সিং কোর্স পরিচালনা শুরু করে। এতে জটিলতা তীব্র আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। জটিলতা নিরসনে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর গত বছরের নভেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, নার্সিং কাউন্সিল, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের ঊর্ধ্বতন ৮ কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠিত হয়। কমিটি গত বছরের ২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে সুপারিশ করেন। সুপারিশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের সিভিল পিটিশন লিভ টু আপিল নং ২১৪৩/২০১৬ মামলার নির্দেশনা মোতাবেক মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স সংক্রান্ত সব শিক্ষা কার্যক্রম ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট এর আওতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স বন্ধ এবং বোর্ডের আইন-২০১৮ সংশোধনের সুপারিশ করেন। ওই আইনের তফসিলের ১-এর ক্রমিক নং-১ (ঞ) এবং ৪-সহ, উক্ত তফসিলে উল্লিখিত মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিধানাবলি বিলুপ্ত/সংশোধন করে ৩০ দিনের মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগকে কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।
সামগ্রিক বিষয়ে চিকিৎসা শিক্ষা অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন আকারে যে সিদ্ধান্ত জারি করেছে তা স্বাস্থ্য খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। এখন থেকে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর শিক্ষা পদ্ধতিতে কোনো ত্রুটি থাকবে ন। এমনকি একক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় শিক্ষার মান নিয়েও থাকবে না কোনো প্রশ্ন।
Discussion about this post