নিজস্ব প্রতিবেদক
নারী জাগরণের কথা উঠলেই যে মহীয়সী নারীর নাম সবার আগে বাঙালীদের মনে জেগে ওঠে, তিনি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন । তিনি ছিলেন বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত, গভীরভাবে সমাজ সচেতন ও যুক্তিবাদী। অন্যদিকে সমাজ পরিবর্তনে একনিষ্ঠ সংগঠক।
নারীদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসতে এই নারী সবার আগে নিজের হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া দিবস আজ। দিবসটি বাংলাদেশে সরকারিভাবে একটি জাতীয় দিবস হিসেবেও বিবেচিত।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে, জমিদার পরিবারে। অল্প বয়সে বিহারের অধিবাসী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।
বেগম রোকেয়ার রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে- মতিচূর (প্রবন্ধ), sultana’s dream (নকশাধর্মী রচনা), পদ্মরাগ (উপন্যাস), অবরোধবাসিনী (গদ্যগ্রন্থ) ইত্যাদি। এ ছাড়া আছে অসংখ্য প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, ব্যঙ্গাত্মক রচনা ও অনুবাদ।
ধর্মান্ধ সমাজে তখন নারী শিক্ষার ছিল নিষিদ্ধ যুগ । পরিবারের কঠোর অনুশাসনের পরও জ্ঞান অর্জনের অদম্য অনুরাগ এক সময় বেগম রোকেয়াকে নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মহিয়সী এই নারীকে তার জন্মভূমি পায়রাবন্দসহ সারাদেশেই সরকারি-বেসরকারিভাবে স্মরণ করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বেগম রোকেয়ার প্রদর্শিত পথেই উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ প্রত্যয়দীপ্ত নারীরা বিস্ময়কর উত্থান ঘটিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাজের সকল স্তরে নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম করতে সকলের বিশেষত পুরুষদের সহযোগিতা খুবই জরুরি। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার উন্নয়নের প্রায় সকল ক্ষেত্রে নারীকে সম্পৃক্ত করেছে। নারী-বান্ধব নীতির কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অর্জিত হয়েছে স্বীকৃতি ও সম্মাননা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেগম রোকেয়া’ শুধু একটি নাম নয়, তিনি ছিলেন নারী শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান। ঊনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন রক্ষণশীল সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে তিনি নারী জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেন শিক্ষার আলো। ক্ষুরধার লেখার মাধ্যমে নারীর প্রতি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে আঘাত হানেন তিনি। বেগম রোকেয়া তাঁর প্রবন্ধ, গল্প ও উপন্যাসের মধ্য দিয়ে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের কথা উচ্চকণ্ঠে তুলে ধরেন।
দিবসটি উদযাপনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে করোনা মহামারির এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘বেগম রোকেয়া পদক’ প্রদান করা হবে । সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনলাইনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিবেন।
নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শকে সামনে রেখে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় এ বছর পাঁচজন নারীকে এই সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। মনোনয়নপ্রাপ্তরা মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরার কাছ থেকে পদক, সনদ ও চেক গ্রহণ করবেন।
Discussion about this post