নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা বিপর্যয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আজ সাত মাস ! ফলে শিক্ষার্থীদের ‘শিখন-ঘাটতি’দেখা দিয়েছে। তাই নতুন শ্রেনীতে উঠা শিক্ষার্থীদের আগের শ্রেনীর পাঠ্যবইয়ের অপরিহার্য অংশটুকু রুটিন করে নতুন পাঠের আগে পড়ানো হবে। আর তাই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নতুন বইয়ের সাথে আগের ক্লাসের পুরনো বইও নতুন ক্লাসে আনতে হবে। এ কারণে পুরনো বই সারা বছরই সঙ্গে রাখতে হবে।
এর আগে পুরনো বই নষ্ট না করা এবং সংরক্ষণের জন্য মাঠ কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির জন্য পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নতুন ক্লাসেও শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকবে পুরনো বই।
এ ধরনের পাঠ নিতে হবে প্রাথমিক এবং নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের। এছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্যও তিন মাসের একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, আগের শ্রেণির লেখাপড়ার সঙ্গে পরের শ্রেণির একটি ধারাবাহিকতা আছে। বিশেষ করে কিছু বিষয় আছে যেটা আগের শ্রেণিতে না পড়লে পরের শ্রেণির পাঠ বোঝা ও অধ্যয়ন সম্ভব নয়। আমরা এমন অপরিহার্য পাঠ চিহ্নিত করার কাজ করছি। এরপর তা শিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। পাশাপাশি আগের পাঠ পড়ানোর বিষয়টি সাপ্তাহিক রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হবে। রুটিন দেখে শিক্ষক তা পড়াবেন।
তিনি আরও বলেন, ঘাটতি পূরণের জন্য আগের শ্রেণির পাঠ্যবই পড়ানো দরকার। তাই সেই বই সংরক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মাধ্যমে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির শিখন-ঘাটতি পূরণের ওই পরিকল্পনায় প্রাথমিক অংশের নাম দেয়া হয়েছে রিম্যাডিয়াল (প্রতিকারমূলক) প্যাকেজ আর মাধ্যমিক স্তরের অংশের নাম দেয়া হয়েছে ইনটিরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) প্যাকেজ। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার জন্য মোট তিনটি পরিকল্পনা তৈরি করছে এনসিটিবি। এগুলোর মধ্যে আছে প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুটি এবং মাদ্রাসার একটি। ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকের পরিকল্পনা তৈরির কাজ শেষ। উচ্চপর্যায়ের অনুমোদনের জন্য তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মাদ্রাসার পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে।
এছাড়া আরও জানা গেছে, এনসিটিবির পাঠ পরিকল্পনায় প্রত্যেক অধ্যয়ের জন্য ৭টি ক্লাস নির্ধারিত আছে। এর মধ্যে দুটি ক্লাস থাকবে আগের শ্রেণির পাঠ অধ্যয়নের জন্য। এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিশেষজ্ঞ এবং প্রতি বিষয়ে দু’জন করে শ্রেণি শিক্ষকের একটি করে দল বিষয়ভিত্তিক এই পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, গণিতে সরল অঙ্ক করার আগে গুণন, ভাগ ইত্যাদি করতে হয়। এখন যে শিক্ষার্থী আগের শ্রেণিতে এটা করে আসেনি, পরের শ্রেণিতে আগে তাকে এটা শেখানো হবে। এভাবে অন্যান্য বিষয়েও অপরিহার্য দিকগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত সব তথ্য বিষয়ভিত্তিক একীভূত করা হয়েছে। এখন তাও শিক্ষক গাইডে (টিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর তা প্রত্যেক বিদ্যালয়ে পৌঁছানো হবে।
তিনি বলেন, নিম্ন মাধ্যমিকে তিন শ্রেণির জন্য তিনটি আলাদা গাইড হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দুই বছরের জন্য পাঠ্যবই তৈরি করা হয়। যারা নবম বা একাদশে পড়তে পারেনি তারা দশম বা দ্বাদশে পড়বে। যদি করোনা পরিস্থিতি প্রলম্বিত হয় তাহলে তাদের জন্যও আলাদা নির্দেশনা তৈরি করা হবে। অর্থাৎ আগামী জানুয়ারিতে যারা দশম শ্রেণিতে উঠছে তাদের জন্য গোটা বই-ই রাখা হচ্ছে পাঠের জন্য। আর যারা কয়েকদিন আগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে তাদেরও গোটা বই পড়তে হবে।
Discussion about this post