মহান বিজয় দিবসটি আমাদের আনন্দে-অশ্রুতে মাখা একটি দিন । এই বিজয় দিবসের মাত্র দুদিন আগে পরাজিত পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এদেশের রাজাকার, আলবদরদের সহায়তায় সূর্যচেতনার অধিকারী অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল। তাদের স্মরণ করতে গিয়ে চোখের অশ্রু মুছতে হয়েছে। চোখের সেই অশ্রু না মুছতেই স্বাধীনতা লাভের এই বিজয় উল্লাস। গত ৪৯ বছর ধরে জাতি এক চোখে অশ্রু, আরেক চোখে আনন্দ নিয়ে এই দিবসটি পালন করেছে। স্মরণ করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের। স্মরণ করেছে শহীদ চার জাতীয় নেতাকে, ত্রিশ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে এবং চার লাখ বীরাঙ্গনাকে।
ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাংলা হরফ রক্ষা, যুক্ত নির্বাচন প্রবর্তন ইত্যাদি প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দাবি আদায়ের পেছনে ছিল জোরালো সাংস্কৃতিক আন্দোলন। পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক নেতাকর্মীরাও জেল-জুলুম ভোগ করেছেন। এজন্যই মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, ডাঃ আলিম চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার মতো অসংখ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে পাকিস্তানি হানাদারেরা রাজাকারদের সমবায়ে হত্যা করেছিল। তারা আশা করেছিল বুদ্ধিজীবী হত্যা দ্বারা বাঙালী জাতিকে মেধাশূন্য করে গেলে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।
শত ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতার অর্জনের অর্ধশতাব্দী অতিবাহিত হতে চলেছে, অথচ আমরা কি পেরেছি স্বাধীনতা উপভোগ করতে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে? স্বাধীনতাবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি বারবার দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং আজও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে-স্বাধীনতার যুদ্ধের পিছনে মুক্তিযোদ্ধাদের কী উদ্দেশ্য ছিল? ত্রিশ লক্ষ শহীদের কাছে আমরা ঋণী, আমরা কি পেরেছি তাদের এই ঋণ পরিশোধ করতে?
আমাদের সবার উচিত দেশের ইতিহাস জানা। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আমাদের গৌরবময় সোনালি ইতিহাস ভালো করে জানেন না। সবারই উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশকে ভালোবাসা, দেশের জন্য কাজ করা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফসল এ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। মুক্তিযুদ্ধকে জেনেছে ইতিহাস পড়ে, সিনেমা দেখে, দাদা-বাবার মুখ থেকে গল্প শুনে। তাই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বেশী বেশী করে মুক্তিযুদ্ধকে চর্চা করতে হবে। আমরা যতই এ নিয়ে জানবো ততই আমরা আবিষ্কার করবো আমাদের নিজস্ব সত্তাকে।
একাত্তরের বিজয়গাথা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় বর্তমান বাংলাদেশের সমৃদ্ধি সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে শীর্ষে উঠেছে।
বিজয় দিবস আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া বিজয়ের আনন্দ যেমন বেশি, ঠিক তেমনি দায়িত্বটাও অনেক বেশি। আর তাই এগিয়ে আসতে হবে তরুণদের। যারা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। দেশের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ শুধু ১৬ ডিসেম্বরে আবদ্ধ না রেখে দৈনন্দিন জীবনে নিজ কাজের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে পারলেই ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্যে গড়ে তোলা যাবে একটি সুন্দর বাংলাদেশ। বিজয়ের প্রেরণাই হোক আমাদের এগিয়ে চলার মূল প্রত্যয়।
সোনার বাংলা আরও উন্নত হোক, নতুন ভোরের আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ুক দিকে দিকে।
Discussion about this post