নিউজ ডেস্ক
উন্নত বিশ্বের বাহিনীগুলোর সমপর্যায়ে নিতে দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে আধুনিক সমরাস্ত্র ও প্রযুক্তি সংযোজন করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী যেন বিশ্বের অন্য দেশের বাহিনীগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। কোনো দিক থেকে যেন পিছিয়ে না থাকে।
যশোর বিমান বাহিনী একাডেমিতে এ রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অংশ নেই। সেখানে বিভিন্ন দেশেরও সদস্যরা আসেন, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী সবাই তাদের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। কোনোদিক থেকে বাংলাদেশ যেন কোনো কিছুতেই পিছিয়ে না থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের যা যা করা দরকার- আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা আমরা সেটা আমরা করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিমান বাহিনীকে উন্নত ও আধুনিকায়নে ভবিষ্যতে আরও আধুনিক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা হয়তো এখন তেমন অর্থ ব্যয় করতে পারছি না। তবে আমাদের পরিকল্পনা আছে আমাদের বিমান বাহিনীকে আরও যুগোপোযোগী করে গড়ে তোলা।
বাংলাদেশ একদিন যুদ্ধবিমান তৈরিসহ বিজ্ঞানচর্চায় মহাকাশে পৌঁছাবে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি আমরা চালু করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। যেটা লালমনিরহাটে আমরা স্থাপন করছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেন চলাচল, প্লেন নির্মাণ ও মহাকাশ বিজ্ঞানচর্চা হবে।
‘যার মাধ্যমে আমি আশা করি হয়তো একদিন আমরা এই বাংলাদেশে যুদ্ধবিমান, পরিবহন প্লেন ও হেলিকপ্টার তৈরি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া মহাকাশে বিজ্ঞানচর্চা করা, হয়তো একদিন আমরা মহাকাশে পৌঁছেও যেতে পারি। সেই প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে। ’
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক পাঁচটি সি-১৩০জে পরিবহন প্লেন কেনার চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে, যার তিনটি প্লেন ইতোমধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে।
এছাড়াও শিগগিরই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিকেল সিস্টেম, মোবাইল গ্যাপ ফিলার রাডার এবং সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স রাডার যুক্ত হবে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈমানিকদের উন্নততর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে আরও ৭টি অত্যাধুনিক কে-৮ডব্লিউ জেট ট্রেইনার প্লেন সংযোজন করা হয়েছে এবং অচিরেই যুক্ত হতে যাচ্ছে পিটি-৬ সিমুলেটর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং এয়ারম্যান ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সাংগঠনিক কাঠামো ইতোমধ্যে অনুমোদন করেছি। তবে বর্তমানে শুধু শিক্ষা নয়, শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের সংমিশ্রণে শিল্পনির্ভর জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশে বিমান বাহিনীর ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়।
‘এর মাধ্যমে রূপকল্প ২০৪১ এর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিমান বাহিনী আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি এবং এই ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে সরকার সব সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পাশে আছে। ’
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে বিমান বাহিনীর ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাহিনীর প্রতিটি সদস্য, বিশেষ করে নবীন ক্যাডেটদের বলবো- আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ, একটি জাতি। সে কথা সব সময় মাথায় রেখে মনে সাহস রেখে, মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলতে হবে এবং নিজেদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এ অনন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্যাডেটদের বলবো, তোমরা নিজেদের এমনভাবে গড়ে তুলবে হবে, যেন আমাদের এই বাংলাদেশ তোমাদের মতো তরুণদের কাছে যে প্রত্যাশা করে সেটা পূরণ করার উপযুক্ত হয়ে নিজেদের গড়ে তুলবে।
আজকের নবীনরাই ২০৪১ এর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। ২১০০ সাল পর্যন্ত আমরা পরিকল্পনা দিয়ে যাচ্ছি, ডেল্টা প্ল্যান। কাজেই ৪১-এ যারা দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্ণধর, আজকের নবীন কর্মকর্তারা তোমরাই হবে সেই কর্ণধর, তোমরাই আমার ২০৪১ এর সৈনিক।
‘সেভাবে নিজেদের গড়ে তুলবে, দেশকে ভালোবাসবে, মানুষকে ভালোবাসবে, দেশ ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ থাকবে, সেটাই আমরা চাই। জাতির পিতার আর্দশ নিয়ে তোমরা এগিয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ আমরা আর পিছিয়ে থাকবো না।
হিমছড়িতে আটকে পড়া কয়েকজন ছাত্রকে উদ্ধার করায় বিমান বাহিনীর প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারি, ঘূর্ণিঝড় আম্পানসহ বিভিন্ন দুর্যোগে বিমান বাহিনীর অবদানের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিমান বাহিনীর সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।
Discussion about this post