আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাজ্যে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন নিয়ে করণীয় বিষয়ে বৈঠক ডেকেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেন, তথ্য আদান-প্রদানের উদ্দেশ্যে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
সংস্থাটির ইউরোপের আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স ক্লুজ এক টুইট বার্তায় বলেন, করোনার এই নতুন ধরনের ভাইরাসের বিষয়ে তুলনামূলক আরও ভালো তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত চলাচলে সীমাবদ্ধতা আনা বুদ্ধিমানের কাজ।
নতুন প্রজাতির এ মহামারি বিবর্তনের একটি স্বাভাবিক অংশ বলে গতকাল জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে সংস্থার জরুরি বিভাগের প্রধান মাইক রায়ান বলেন, ‘আমাদের একটি সাম্যাবস্থা খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা ও জনসাধারণকে অবহিত করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি যে ভাইরাস বিবর্তনের একটি স্বাভাবিক অংশ সেটাও জানানো দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সময়েই ভাইরাসটি এত নিবিড়ভাবে, সতর্কতার সাথে ও বৈজ্ঞানিকভাবে অনুসরণ করতে পারাটা বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি ইতিবাচক উন্নয়ন। যে দেশগুলো এই পর্যবেক্ষণের কাজ করছে তারা প্রশংসার দাবিদার।’
নতুন এই প্রজাতিটির সংক্রমণরোধে বেশকিছু দেশ যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফ্রান্সের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘলাইন জমেছে সীমান্ত এলাকায়।
এদিকে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনা নতুন ধরন প্রতিরোধে নিজেদের ভ্যাকসিন কেমন কাজ করবে, তা পরীক্ষা করছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার ও মডার্না। তাদের আশা, সম্প্রতি উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনেই ভাইরাসটির নতুন ধরন মোকাবিলা সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখনও করোনার নতুন ধরন চিহ্নিত হয়নি। তবে হতে পারে সেটি ইতোমধ্যেই দেশটিতে পৌঁছে গেছে, কিন্তু শনাক্ত হয়নি।
সিডিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মধ্যে ভ্রমণ চালু থাকায় ভাইরাসের নতুন ধরন আমদানি হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।
মডার্না বলেছে, ভাইরাসের নতুন ধরনটির বিরুদ্ধে তাদের ভ্যাকসিনে সৃষ্ট রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতাই যথেষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহ তারা এ বিষয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।
আর ফাইজার বলেছে, ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিদের রক্তের নমুনায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন কেমন আচরণ করে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে তারা।
নভেল করোনাভাইরাস আগেও রূপান্তরিত হয়েছে এবং দুটি কোম্পানির ভ্যাকসিনই ভাইরাসটির রূপান্তরিত ধরনের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসের রূপান্তরের গুরুত্ব অনিশ্চিত। এরপরও বেশ কিছু দেশ বাড়তি সতর্কতাস্বরূপ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল অ্যাডামস বলেন, আমরা যা করি, ভাইরাসের ব্রিটিশ ধরনটি তা বদলে দেবে না। আমাদের দরকার মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ভিড় পরিহার করা। আর দরকার একটা ভ্যাকসিন এবং সেটি পাওয়ার পর গ্রহণ করা।
অবশ্য ফাইজারের ভ্যাকসিনের যৌথ নির্মাতা জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের প্রধান দাবি করেছেন, তাদের ‘বৈজ্ঞানিক আত্মবিশ্বাস’ রয়েছে যে, ভ্যাকসিনটি নতুন ধরনের বিরুদ্ধেও কাজ করবে। তবে এ বিষয়ে পুরো তথ্য পেতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
মঙ্গলবার বায়োএনটেক প্রধান নির্বাহী উগুর শাহিন বলেন, আমাদের ভ্যাকসিন এই নতুন ধরনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে কি না, তা এই মুহূর্তে জানি না। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে এটি খুবই সম্ভব যে, এই ভ্যাকসিনের প্রতিরোধক্ষমতা ভাইরাসের নতুন ধরনটি মোকাবিলা করতে পারবে।
তিনি বলেন, নতুন ধরনটিতে নয়টি রূপান্তর ঘটেছে। তবে আগের ধরনের ১ হাজার ২৭০টি অ্যামিনো অ্যাসিডের মধ্যে নতুনটির পার্থক্য মাত্র নয়টিতে। সুতরাং, এর প্রোটিন কার্যত একই রয়েছে। আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে বায়োএনটেক ভাইরাসের নতুন ধরনটির বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন প্রস্তুত করে ফেলতে পার
Discussion about this post