নিউজ ডেস্ক
করোনার নতুন স্ট্রেইন দেখা দিয়েছে। আতঙ্কের কথা হচ্ছে এতে বেশি সংক্রমিত হচ্ছে শিশুরা। চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে ঢাকার বাইরে যাওয়াসহ অনুষ্ঠানও হচ্ছে বেশি। সেখানে মাস্ক নেই, স্বাস্থ্যবিধি নেই, সামাজিক দূরত্বেরও বালাই নেই। অথচ এসব কারণে করোনায় বড়দের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও।
বাংলাদেশে এ নিয়ে আপাতত অতটা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে জানালেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই স্ট্রেইন সহজে দেশে ঢুকতে পারবে না। আপাতত তাই সতর্ক হতে হবে বাবা-মায়েদেরই।স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত করোনাতে শূন্য থেকে ১০ বছরের শিশু মারা গেছে ৩৪ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে মারা গেছে ৫৭ জন।করোনাতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য প্রথম করোনা ইউনিট করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে এখন ২৪ জন রোগী আছে।
শুরুর দিকে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক কম ছিল। পরে তা বেড়েছে জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. সাঈদা আনোয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রথমদিকে শিশুরা বাসায় থাকতো। বাবা-মায়েরাও বের হতেন কম। এখন শিশুরা সংক্রমিত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, নতুন স্ট্রেইনে সংক্রমণের হার আগের চেয়ে বেশি। আমেরিকায় নতুন স্ট্রেইনে শিশুরাই বেশি সংক্রমিত হয়েছে।
এর ওপর আবার শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে পোস্ট কোভিড জটিলতা-মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিন্ড্রোম ইন চিলড্রেন-এ (এমআইএস-সি)। এটা খুবই মারাত্মক।
ডা. সাঈদা বলেন, ক্যানসার, কিডনি রোগসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত শিশুরা যখন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে, তখন তারা করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছে। এসব শিশুর বিশেষ করে ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুহার এমনিতেই অনেক। করোনা আক্রান্ত হলে কমে যাচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এতে ক্যানসার চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে।
অন্যদিকে ৯ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে আতঙ্কের খবর হচ্ছে, এ বয়সের শিশুরা আক্রান্ত হলে তাদের ফুসফুসও সংক্রমিত হচ্ছে। তাই বাবা-মায়েদের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে নিতান্তই প্রয়োজন না হলে সন্তানকে বাইরে বের না করা, জনসমাগমে না নেওয়া আর অবশ্যই মাস্ক পরানো। তবে শ্বাসকষ্ট রয়েছে, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মাস্ক না পরানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এসব সন্তানের প্রতি নিতে হবে বাড়তি যত্ন। তারা বাইরে খোলা মাঠে যেতে পারবে, কিন্তু জনসমাগমে একেবারেই নয়।
ডা. সাঈদা আনোয়ার বলেন, মাস্ক পরা, ভিড়ে না যাওয়া, হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে এমআইএস-সি হয়ে গেলে সেটা মারাত্মক হতে পারে। শিশুর জ্বর, হাতে পায়ে লালচে দানা, পেট খারাপ হওয়া, পেট ব্যথা, বমি হওয়া, মাথা ব্যথা হলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন এটাকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। মোটেও দেরি করা চলবে না।
তিনি আরও জানালেন, নতুন এ স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য কোনও ভ্যাকসিন নেই। ১৮ বছরের নিচে ভ্যাকসিনও দেওয়া হবে না।
কিন্তু ওই বয়সীরা এখন বেশি ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বলে জানালেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীর কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুদের নিরাপদ রাখার একমাত্র উপায় হলো অন্তত দুই সপ্তাহ ইউরোপের ফ্লাইট বন্ধ রাখা। যারা বাইরে থেকে আসবে, তাদের অন্তত দুই সপ্তাহ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা।’
Discussion about this post