নিউজ ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনীতিবিদদের আদর্শ থাকা দরকার। সৎ পথে থাকলে সবকিছু অর্জন করা যায়।
গণভবন থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তিনি।
সংগঠনের ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আর মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে, প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালবো। বিজয়ী জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে। দেশ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, সততা-নিষ্ঠা ও লক্ষ্য স্থির রেখে যারা আদর্শবান হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে, তারাই বড় হবে, দেশকে কিছু দিতে পারবে। আর যারা ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সার দিকে তাকাবে হয়তো তারা ভোগ করতে পারবে, কিন্তু দেশ ও জনগণকে কিছু দিতে পারবে না, নিজেরাও বড় হতে পারবে না। আর জ্ঞান ও শিক্ষাই সবচেয়ে বড় সম্পদ, কেউ কোনদিন তা কেড়ে নিতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে সেভাবেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।
মাতৃভাষা থেকে স্বাধীনতা এবং পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে সংগঠনটির সাবেক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কোন কিছু অর্জন করতে হলে এবং যে কোনো আন্দোলন সফল করতে হলে শক্তিশালী সংগঠন দরকার। আর এ কারণেই ১৯৬৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেছিলেন। আমিও সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজে বেশি মনোযোগ সবসময় দিয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে এখন ভিন্নভাবে দেখে। যারা এক সময় বলতো বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও কিছুই করতে পারবে না, বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি। তারাই এখন বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখে। বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার কারণে হয়ত আমরা একটু থমকে গেছি। কিন্তু করোনার মধ্যেও আমরা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তবে করোনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে। আমাদের দেশে যেন দুর্ভিক্ষের ছায়া না পড়তে পারে সেজন্য কৃষি উৎপাদনের চাকাকে সচল রাখতে হবে, দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদি না থাকে- সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, করোনাভাইরাসের সময় আক্রান্ত রোগী এবং যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাহায্য করা। ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া, যখন ঝড় (আম্পান) আসল সেই ঝড়ের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, এই যে মানুষের সেবার জন্য যে কাজগুলো করে যাচ্ছো সেটাই হচ্ছে বড় কাজ। কাজেই সেইভাবে নিজেকে গড়ে তুলবে, আদর্শবান একজন নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। যেন আগামী দিনে দেশটাকে তোমরা এগিয়ে নিতে যেতে পার।
তিনি আরও বলেন, কারণ আমাদের আর কত? পঁচাত্তর বছর বয়স, আর কতদিন! ছাত্রলীগের ৭৩, আমার ৭৫। আমিও পঁচাত্তরে পা দিয়েছি। কাজেই আমরা আর কতদিন চলবো! কিন্তু তোমাদেরকে তো সামনে নেতৃত্ব দিতে হবে। সেইভাবে তোমরা নিজেকে গড়ে তুলবে।
নিজের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ইতিহাস অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। আমি ছাত্রলীগের কোনো বড় নেতা ছিলাম না। ছোট্ট খাট্ট নেতা, মাও (মূল নেতা তথা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) না। আমি একজন কর্মী ছিলাম। সর্বক্ষণিক কর্মী। স্কুল জীবনে বিভিন্ন স্কুলে যেয়ে যেয়ে সংগঠন করে এসেছি, কলেজ জীবনে কলেজে যেয়ে যেয়ে সংগঠন করেছি। সেই ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন থেকেই শুরু করেছি মিছিলে যাওয়া। তখন থেকেই মিছিলে গেছি। তারপরে কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম মিছিলে সবসময় ছিলাম। কখনো আমরা কিছু হওয়ার কথা চিন্তা করিনি। আমার ভাই কামাল সেও সবসময় এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। সবসময় একজন কর্মী হিসেবেই আমরা কাজ করেছি। এতো বড় দায়িত্ব নিতে হবে এটা আমাদের স্বপ্নেও ছিল না। দুর্ভাগ্য যে ১৯৭৫ সালে সব হারালাম। যা হোক, এখন বাংলাদেশের মানুষের সেবা করতে পারছি। দেশের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি ছাত্রলীগকে বলবো, নিজের এই ঐতিহ্য, এটা মাথায় রেখে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে তোমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলবে দেশেপ্রেমে। বাংলাদেশ ২০২০ পার হয়ে ২০২১’এ এসেছি। এটা হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর। কাজেই মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। যাদের গৃহ নাই, তারেদকে ঘর করে দিচ্ছি। তোমাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, তোমরা নিজ নিজ এলাকায় খোঁজ করো, কোন মানুষটা গৃহহীন আছে। সেই মানুষটা পেলে অবশ্যই আমাকে খবর দেবে এবং স্থানীয়ভাবে খবর দেবে। তাকে আমরা বিনা পয়সায় ঘর করে দেব। প্রত্যেকটা মানুষকে ঘর করে দেব। প্রত্যেকে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ দিয়ে আলো প্রজ্বলিত করব। ইতোমধ্যে ৯৯ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। কাজেই এ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সকলেই পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ছাত্রলীগের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করতে নাকি তার ছাত্রদলই যথেষ্ট। শুধু খালেদা জিয়া নয়, জিয়াউর রহমানও ছাত্রদের হাতে অস্ত্র-অর্থ-মাদক তুলে দিয়ে বিপথে চালিত করেছিল। ’৭৫ পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর শুধু সামরিক বাহিনী নয়, আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকের লাশও পাওয়া যায়নি। ওই সময় অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী জিয়ারা ছাত্রলীগকে নিজেদের কাছে টানার চেষ্টা করেছে, যাদের পারেনি তাদেরকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে, লাশ পর্যন্ত গুম করে দিয়েছে।
করোনাভাইরাস একটা জিনিস শিক্ষা দিয়ে গেছে যে, যার যতই টাকা পয়সা থাকুক, যার যতই অর্থ সম্পদ বাড়ি গাড়ি থাকুক না কেন, সেগুলো যে একেবারেই ব্যর্থ, তার যে কোন মূল্য থাকে না- করোনাভাইরাস অন্তত এই শিক্ষাটা মানুষকে ভালভাবে দিয়েছে।
ছাত্রদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, বিদ্যা বা জ্ঞান এটা এমন একটা সম্পদ, যে সম্পদ কেউ কোনদিন কেড়ে নিতে পারবে না। এই সম্পদ থাকলে জীবনে কখনো হোঁচট খাবে না। চলার পথ মসৃণ করে এগিয়ে যেতে পারবে। আমাদের ছেলে মেয়েদের আমি সেই শিক্ষাই দিয়েছি। কাজেই তোমরাও সেই শিক্ষা নেবে। ছাত্রলীগের সেটাই কাজ থাকবে। নিজেরা পড়বে অন্যকে পড়াও। আর করোনাভাইরাসের সময় নির্দেশ দিয়েছি- নিজের গ্রামে গিয়ে কেউ নিরক্ষর থাকলে তাঁকে অক্ষর জ্ঞান দাও।
এসময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সারাদেশের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান সাংগঠনিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ’৭৫ পরবর্তী দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। এসময় মঞ্চে সংগঠনটির সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সাফল্যে ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের দীর্ঘ ৭৩ বছরের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি ছাত্রলীগের রক্তদান কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন।
Discussion about this post