নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অনমনীয়তার কারণে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে এখনো একমত হতে পারেনি চার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে বুয়েট ছাড়াই বাকি তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় রুয়েট, কুয়েট ও চুয়েটের আলাদা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। নেতৃত্ব নিয়ে সঙ্কট তৈরি হওয়ায় চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এ অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট ও কুয়েটের উপাচার্য এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে সবাই একমত হতে না পারায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহের সভাপতিত্বে সভায় বুয়েটের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার খান, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
সূত্র জানায়, ওই সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া গেলেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে ইউজিসি। ফলে চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। তবে বুয়েট বাদে বাকি তিন বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার রুপরেখা চূড়ান্ত করে রেখেছে। শেষ পর্যন্ত বুয়েট গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় না এলে রুয়েট, চুয়েট ও কুয়েট আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেবে।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আজ বিকেলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকেছে কুয়েট কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জি. এম. শহীদুল আলম বলেন, ‘বুয়েট যে প্রস্তাব দিয়েছিল আমরা বাকি তিন বিশ্ববিদ্যালয় তাতে একমত হতে পারিনি। পরে আমরা আলাদা গুচ্ছে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি একপ্রকার চূড়ান্ত করে রেখেছি। সেক্ষেত্রে ইংরেজি অদ্যাক্ষরে যারা আগে থাকবে, শুরুতে তারা এবং পর্যায়ক্রমে বাকিরা ভর্তি পরীক্ষায় নেতৃত্বে দেবে। তবে ইউজিসি বুয়েটসহ পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেছে। এ অবস্থায় আজ বিকেল ৩টায় আমাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’
জানা গেছে, সম্প্রতি বুয়েটের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভার প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে চারটি প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমসিকিউ পরীক্ষা হবে। এতে উত্তীর্ণ ভর্তিচ্ছুরা বুয়েট ক্যাম্পাসে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবে। এতে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। এ প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে থাকতে চায় বুয়েট।
তবে বুয়েটের প্রস্তাবিত এ ভর্তি প্রক্রিয়ায় অন্য তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় তিনটির কর্তৃপক্ষ বলছে, গুচ্ছ পরীক্ষা হলে অবশ্যই সম-অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হতে হবে। অর্থাৎ একেক বছর একেক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকবে। এছাড়া সবার সমান অংশগ্রহণে যে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটি থাকবে, সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রস্তাবনা দিয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউজিসির পাশাপাশি বুয়েটকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (বিআইটি) অধীনে আগে কুয়েট, চুয়েট ও রুয়েটে একযোগে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। সে সময় যথাক্রমে বিআইটি খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী নামে পরিচিত ছিল। এখন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গ আসায় এবং বুয়েটের প্রস্তাবে রাজি না হতে পারায় তিন বিশ্ববিদ্যালয় মিলে আবারো সে ধরনের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
বুয়েটের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হলেও তাতে নেতৃত্ব থাকতে চায় বুয়েট। এ প্রস্তাব মোতাবেক ভর্তি পরীক্ষা সিংহভাগ হবে বুয়েট ক্যাম্পাসে। এ সিদ্ধান্তে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় রাজি না হলে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা একাধিকবার জানিয়েছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
Discussion about this post