নিউজ ডেস্ক
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন বিতরণ ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে ১৪ সদস্যের কমিটি।
গত ৩ জানুয়ারি করোনা ভ্যাকসিন বিতরণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বৈঠক করেন চসিক প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি। বৈঠকে ভ্যাকসিন বিতরণের পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা হয়। নির্ধারণ করা হয় কর্মপরিকল্পনা। এছাড়া বিভিন্ন টিকা প্রদানের জন্য গঠন করা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোকে সক্রিয় করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে করোনার টিকা পাওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। এখন চলছে অ্যাপ তৈরির কাজ। টিকা বিতরণের ব্যাপারে আগাম ঘোষণা দেওয়া হবে।
তালিকায় থাকছেন যারা
করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে কারা অগ্রাধিকার পাবেন তা নিয়ে সরকারের একটি নির্দেশনা রয়েছে। এর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুত করা হচ্ছে তালিকা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, করোনার সম্মুখ সারির যোদ্ধাসহ, মুমূর্ষু ও বয়োজ্যেষ্ঠ রোগীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার তালিকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাখা হবে।
তিনি বলেন, ফ্রন্টলাইনে থাকা ব্যক্তি ছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠি এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে যারা ভুগছেন তারা তালিকায় থাকবেন। এভাবেই সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে আলাদা কমিটি আছে। ভ্যাকসিন সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ এবং বিতরণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন কারা পাবেন এ নিয়ে একটি তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। তালিকা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায় চসিকের উদ্যোগ
ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গত ৩ জানুয়ারি চসিক প্রশাসকের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঠিক করা হয় কর্মপরিকল্পনা। চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, করোনা নিয়ে যেসব এনজিও কাজ করেছে তাদেরকে কমিটিতে রাখতে নির্দেশনা রয়েছে। ভ্যাকসিন কারা পাবেন এ বিষয়েও একটি নির্দেশনা আছে। ১০ জানুয়ারির মধ্যে একটি তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন তাদের তালিকায় রাখার ব্যাপারে কাজ চলছে। তাদের এনআইডি নাম্বার সহ সব তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখানে ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।
চসিক প্রশাসক বলেন, ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা তদারকিতে একটি টেকনিক্যাল টিম গঠন করা হবে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুইজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন। তারা ভ্যাকসিন কিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, কোথায় রাখতে সে বিষয়ে পরামর্শ দিবেন এবং ভ্যাকসিন রাখার জায়গাগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করছেন।
ভ্যাকসিন বিতরণ ব্যবস্থা কেমন হবে?
অন্যান্য টিকাদান কর্মসূচি যেভাবে সম্পন্ন করা হয় ঠিক একইভাবে সম্পন্ন করা হবে করোনার ভ্যাকসিন বিতরণ প্রক্রিয়া। তার আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাংলানিউজকে বলেন, করোনার টিকা সবাই পাবেন। তবে তা পর্যায়ক্রমে। সরকারের নীতি নির্ধারক মহল থেকে যে নির্দেশনা আসবে আমার মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করবো। সরকারের যে ইপিআই কার্যক্রম আছে তা তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। ইপিআই ভ্যাকসিনগুলো যেভাবে সংরক্ষণ করা হয়, করোনার ভ্যাকসিনগুলোও সংরক্ষণ করা হবে একইভাবে। এজন্য আমরা আলাদা করে ‘আইএলআর’ ফ্রিজ প্রস্তুত রেখেছি। যেখানে এই বিশেষ ফ্রিজের স্বল্পতা রয়েছে তা আনার ব্যবস্থা করছি। আশা করছি সংরক্ষণে কোনো সমস্যা হবে না।
সিভিল সার্জন বলেন, টিকা প্রদানেও কোনো সমস্যা হবে না। স্বাস্থ্যের যে জনবল আছে তা নিয়ে আমরা সহজেই টিকাদান কার্যক্রম চালাতে পারবো। টিকাদান কার্যক্রম শুরুর আগে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সরকার ভ্যাকসিন যদি উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ে দিতে চায়, সবক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা রয়েছে।
ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, পুরো প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে একটি খসড়া তালিকা চাওয়া হয়েছিল মন্ত্রণালয় থেকে। তখন আমার ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের একটি খসড়া তালিকা পাঠিয়েছি। তবে সেটি চূড়ান্ত নয়।
ধনীদের অর্থের বিনিময়ে ও গরীবদের ফ্রি দেওয়ার দাবি
ভ্যাকসিন পাইকারি হারে না দিয়ে ধনীদের অর্থের বিনিময়ে এবং গরীবদের বিনামূল্যে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান। এছাড়া করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
ডা. মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যাদের করোনা হয়েছে তাদের অ্যান্টিবডি টেস্ট করা ছাড়া ভ্যাকসিন দেওয়াটা অপ্রয়োজনীয়। কারণ একই ধরনের দুটি অ্যান্ডিবডি যদি শরীরে যায় তাহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই অ্যান্টিবডি টেস্ট ছাড়া ভ্যাকসিন নেওয়াটা অপ্রয়োজনীয়। যাদের অ্যান্টিবডি নেই তাদের জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা সরকারিভাবে হওয়া দরকার। সরকারি হাসপাতালগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত করে তারপর কার্যক্রম চালু করা দরকার। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল যেগুলো মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তাদের হাতেও ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। তবে ভ্যাকসিন সাপ্লাই করতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। পাইকারি হারে ধনী-গরীব সকলকে বিনামূল্যে টিকা দান করা ঠিক হবে না। যার টাকা আছে সে কেন বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন নিতে যাবে? বেসরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন প্রক্রিয়া চালু হলে ধনীরা সেখান থেকে অর্থের বিনিময়ে ভ্যাকসিন নিবেন। আবার বেসরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে, শাহেদ কোম্পানির মতো কোনো কোম্পানির হাতে যেন ভ্যাকসিন চলে না যায়।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের কোভিশিল্ড টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আমদানি করছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এ টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ আসার কথা রয়েছে বাংলাদেশে।
Discussion about this post