নিউজ ডেস্ক
প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ আসছে বলে জানিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৪ শতাংশ সুদে ঋণ সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) করোনাকালে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ভূমিকা শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘একটি প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে যাচ্ছি। এটা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাব। অক্টোবর মাসে এটা নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল সেটার ডিসবার্সমেন্টটা ভালো ছিল না। অনেক চাপ প্রয়োগ করেছি, ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটা অনীহাও ছিল। আর একটা পরিস্থিতি তারা ফেস করেছে সেটা হল তাদের কাছে (ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা) তথ্য ছিল না। এসএমই সেক্টরের গ্রাহকদের সঙ্গে তাদের পরিচিতিটা কম।’
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘গত তিন মাসে আমরা প্রচুর আলোচনা করেছি বাংলাদেশ ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন, পিকেএসএফের সঙ্গে। বড় এমএফআই (ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা), ক্ষুদ্র এমএফআইগুলোর সঙ্গে আমরা বসেছি। অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটা টিম করে দিয়েছিলাম, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ডিসেম্বরের মধ্যে এটি (প্রণোদনা প্যাকেজ) কেবিনেটে পাঠাবো। ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগ তাদের মতামত দিয়ে এটিকে অনুমোদন করে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ধরছি সেই অংশটা (যাদের প্রণোদনা দেয়া হবে); কুটির, ক্ষুদ্র এবং মাইক্রো এভাবেই আমরা ধরছি। মাঝারি পর্যায়েরটাও (মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা) আমরা আনছি না। ডাউন দ্য লাইন যারা আছে, যাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। সেই গ্রুপটাকে রিচ করার জন্যই আমরা এই প্যাকেজটা পরিকল্পনা করেছি।’
আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলছিলেন এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা আছে, ক্ষুদ্র উৎপাদক যারা আছেন তাদের কাছে আমাদের পৌঁছানোটা খুব জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি ক্ষুদ্র লেভেলের ডিমান্ডটা বাঁচিয়ে রাখতে না পারি বা সেখানে সাপ্লাই চেইন ধরে রাখতে না পারি, তবে সেটা আমাদের জন্য সমস্যা হবে। আমরা যদি সময়মতো তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারি, সেই উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
‘আজই (১৪ জানুয়ারি) চিঠি যাচ্ছে চলে যাচ্ছে কেবিনেটে। এটা কেবিনেট ডিভিশন থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। সেখান থেকে সহসাই এটা অনুমোদিত হবে। বিস্তারিত কার্যক্রম আমরা পরবর্তীতে সময়মতো জানিয়ে দেব,’ বলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব।
তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে (প্রস্তাবে) আমরা এমএফআইগুলোকে বলেছি তারা সরাসরি টাকাটা পাবে। এখানে আমরা যতটুকু পারি লেয়ারটা কমিয়ে দিয়েছি।’
প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে পিকেএসএফ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা খুব জরুরি হবে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এখানে আমরা টার্গেট করেছি এমএফআইগুলোকেই। তাদের মাধ্যমেই এই টাকাটা যাবে। কারণ এমএফআই চেনে এই সমস্ত ক্লায়েন্ট কারা। তাদের যোগাযোগটা ভালো, ব্যাংকের চেয়ে বেশি যোগাযোগ তাদের।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পিকেএসএফ করোনাকালে অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সবাই সম্মিলিতভাবে এভাবে কাজ না করলে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশে সফল হতে পারত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিকেএসএফ দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কাজ করে চলেছে এবং দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। আগে দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ ছিল, এখন সেটা ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অতি দারিদ্র্যও প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। পিকেএসএফের মতো প্রান্তিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করা এবং সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।’
পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘সরকার পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিতরণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছিল। এরমধ্যে দেয়া আড়াইশো কোটি টাকা আমরা বিতরণ করেছি। আরও আড়াইশো কোটি টাকা আমরা পাচ্ছি দু-একদিনের মধ্যে, সেটাও বিতরণ করা হবে।’
‘আমাদের সহযোগী সংগঠন তারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মানুষকে সচেতন করেছেন। তারা মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি করেছি।’
‘আমাদের যারা মাঠে কাজ করেন তারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার। তাই তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাওয়ার যোগ্য,’ বলেন খলীকুজ্জমান।
মাঠ পর্যায়ে পিকেএসএফের ৬২ জন কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান।
ওয়েবিনারে পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহসহ সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন।
Discussion about this post