নিউজ ডেস্ক
বগুড়ার নিভৃত পল্লীর একটি গ্রাম হলো বালেন্দা। জেলার শেরপুর উপজেলার ওই গ্রামটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠ। আর সেই মাঠেই শুভ সূচনা হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সৃষ্টির পদযাত্রা।
মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের সহযোগিতায় এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এটা হলে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশের জন্য নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে।
পরে শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভায় জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘জাতির পিতা দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। কৃষককে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। তাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের প্রতীক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১২০ বিঘা জমির বিশালায়তনের এই শস্যচিত্রের মাধ্যমে সেটি ফুটে তোলার জন্য পদযাত্রা শুরু হলো। এই কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে অচিরেই গিনেজ বুকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস গড়বে।’
কৃষিবিদদের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের কৃষিবিদরা যে সফল তা এই কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন। তবে এই কর্মসূচির মাধ্যমে শুধু গিনেজ বুকে বাংলার নাম লেখা নয়, বাংলার বুকে জাতির পিতার নাম যেন চিরতরে লেখা থাকে সেটাই লক্ষ্য। তাই এটাই শেষ নয়, এখান থেকে শুরু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। আর এসব কিছুর পেছনে মূলচিন্তা হলো বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।’
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন। তিনি বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের প্রতীকের নাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই যারা বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলতেন শস্যচিত্রের মাধ্যমে তাদের উচিত জবাব দেয়া হবে। পাশাপাশি যারা দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ব্যাহত করতে চায়, তাদেরকেও এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হবে এটি। এই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর আয়তন হবে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। শস্যচিত্রের দৈর্ঘ্য হবে ৪০০ মিটার এবং প্রস্থ ৩০০ মিটার। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গিনেজ বুকে স্থান পেয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবেন। পাশাপাশি কৃষকরাও নতুনভাবে উজ্জীবিত হবেন।’
ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে বিগত কয়েকমাস আগে থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামের চল্লিশ একর অর্থাৎ ১২০ বিঘা জমি কৃষকদের কাছ থেকে লিজ নেয়া হয়। এরপর বিদেশ থেকে আমদানি করা দুই ধরনের উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পুরোদমে চারা রোপণ কাজ চলছে।’
‘ধাপে ধাপে এটি পর্যবেক্ষণ করে সঠিক বিন্যাস নিশ্চিত হবে। আর তখনি শস্যচিত্রে ফুটে উঠবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। যা পাখির চোখে (উঁচু থেকে) এই চল্লিশ একর জমিতে রোপণকৃত ধানের দৃশ্যে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ধরা পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জনকের জন্মশতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতেই বিশেষ জাতের ধানের চাষের মাধ্যমে জাতির পিতাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যেই এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।’
বিশ্বের এই সর্ববৃহৎ শস্যচিত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সৃষ্টির জন্য বগুড়া জেলার মাটিকে বেছে নেয়ায় গর্বিত বলে মন্তব্য করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এই অঞ্চলে বাস্তবায়িত হওয়ায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এই উদ্যোগ বগুড়ার জন্য স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে।’
Discussion about this post