শিক্ষার আলো ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার কারণে গত এক দশকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের প্রতিদিন স্কুলে একবেলা করে বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার বৈশ্বিক প্রচেষ্টার যে কষ্টার্জিত ফল, তা বিফলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের লেখকদের মতে, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম আর্থিকভাবে দুর্বল শিশুদের সহযোগিতা প্রদান ও ভবিষ্যৎ নির্মাণে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে লকডাউনের কারণে বিভিন্ন দেশের সরকার তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। মহামারির আগের মতো সমান সংখ্যক শিশুকে স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা ও আরও শিশুকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা ও প্রায় ৭ কোটি ৩০ লক্ষ শিশু, যারা মহামারির আগেও খাবার পেতো না, তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যাপারে এই প্রতিবেদনের লেখকরা বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন।
ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে এ প্রসঙ্গে বলেন, “স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শিশুদের এবং দেশে দেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উন্নতির চিত্র পাল্টে দিয়েছে। প্রতিদিন একবেলা খাবারের কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরা স্কুলে যায়। এর কারণেই লকডাউন শেষে শিশুরা আবার স্কুলে ফিরে আসবে। আমাদের এই কার্যক্রম আগের থেকে আরও শক্তিশালী করে আবার চালু করা প্রয়োজন, যাতে কোভিড কোটি কোটি শিশুর ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে না পারে।”
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ডব্লিউএফপি বিভিন্ন এজেন্সি, দাতা সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সাথে মিলে একটি কোয়ালিশন গঠন করে নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে যেন এই কর্মসূচির পরিসর আরও বৃদ্ধি পায়।
২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে স্কুল থেকে খাদ্য পাওয়া শিশুদের সংখ্যা বৈশ্বিক পর্যায়ে ৯% এবং স্বল্প আয়ের দেশসমূহে ৩৬% বৃদ্ধি পায়, কেননা বিভিন্ন দেশের সরকার এই প্রোগ্রামের পরিসর আরও বৃদ্ধি করে। প্রতিবেদনের লেখকেরা আরও উল্লেখ করেছেন যে, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম সারা বিশ্বের সবথেকে বড় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী।
বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, স্কুল থেকে দেয়া খাদ্য দরিদ্র পরিবার থেকে আসা শিশুদের জীবনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। এই কার্যক্রম ক্ষুধামুক্ত থাকতে যেমন সহায়তা করে তেমনি শিশুর স্বাস্থ্য ও মেধার বিকাশেও ভূমিকা রাখে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে একথা আরও সত্য— যেখানে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম আছে, সেখানে মেয়েদের স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়া, বাল্য বিবাহ এবং কৈশোরকালীন গর্ভধারণের হার অন্যান্য এলাকার তুলনায় কম।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাবার অন্তর্ভুক্ত করলে স্কুল মিল কর্মসূচি অর্থনৈতিক বিকাশেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এতে করে ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা বাড়ে, ফলে স্থানীয় কৃষি ও বাজার ব্যবস্থা দৃঢ় হয় এবং এলাকার খাদ্য ব্যবস্থা শক্তশালী হয়।
প্রতিবেদনের লেখকেরা আরও বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি-উত্তর পৃথিবীতে স্কুল খাদ্য প্রোগ্রামে বিনিয়োগ করা আরও বেশী গুরুত্বের দাবী রাখে, যেহেতু এই কর্মসূচি একটি দেশের জনগণের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পাশাপাশি একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়তা করে থাকে।
কার্যকর স্কুল খাদ্য কর্মসূচির ক্ষেত্রে প্রতি এক ডলার বিনিয়োগ করলে নয় ডলার সমপরিমাণ সুফল ফিরে আসে। এতে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়। ডব্লিউএফপি’র হিসাব অনুযায়ী, স্কুল খাদ্যের সুবিধা পাওয়া প্রতি ১০০,০০০ শিশুদের জন্য অন্তত ১,৬৬৮ নতুন চাকরি তৈরি হয়।
প্রতিবেদনের ভূমিকায় নির্বাহী পরিচালক বিসলে বলেন, “সহযোগী অংশীদারদের সাথে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে ডব্লিউএফপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যাতে বিশ্বের কোন শিশুই যেন ক্ষুধা নিয়ে স্কুলে না যায়, অথবা যেন তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ না করে। সাম্প্রতিক মাসগুলোর ভোগান্তির পর আমরা আরও সুন্দর এক পৃথিবী গড়ার এই সুযোগ অবশ্যই লুফে নেব।”
Discussion about this post