নিজস্ব প্রতিবেদক
আবারো দেশের শিক্ষাক্রমে আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন । সে অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাক্রমে সামঞ্জস্য রেখে পাঠ্যবই বদলে যাবে। পাল্টে যাবে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ব্যবস্থাও। দশম শ্রেণিতে থাকবে আলাদা বই, এর ওপরেই হবে এসএসসি পরীক্ষা। আর এইচএসসি পরীক্ষা হবে দুই ধাপে দুই বছরে। এ ধরনের প্রস্তাবনার আলোকে নতুন শিক্ষাক্রমে আগামী বছর শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১২ সালে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার আসে। এর আগে এ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয় ১৯৯৫ সালেও। নতুন প্রস্তাবনার আলোকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম তৈরি হচ্ছে। এর আলোকে আগামী বছর শুধু চারটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পাবে। এসব শ্রেণির শিক্ষাক্রম লেখার কাজ শেষ হবে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে। এরপর শুরু হবে পাঠ্যবই লেখা। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০২৫ সালে এসএসসির প্রথম পরীক্ষা হবে। আর এইচএসসির প্রথম পর্ব (একাদশ শ্রেণিতে) ২০২৬ সালে এবং দ্বিতীয় পর্ব (দ্বাদশ শ্রেণি) হবে ২০২৭ সালে।
দশম শ্রেণির ২০২৪ সালের মধ্যে এবং দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ২০২৬ সালের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমে বই প্রবর্তন শেষ হবে। এছাড়া ২০২৩ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন পাঠ্যবই পাবে। আর দুই বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা হবে আগামী বছর থেকে। নতুন শিক্ষাক্রমে সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন হবে। তবে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে বর্তমান শিক্ষাক্রমে কিছু বলা নেই। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমেও কোনো দিকনির্দেশনা থাকছে না।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১২ সালে প্রবর্তিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া চলছে। পাঁচ বছর পরপর বিশ্বব্যাপী শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। এটা যুগের চাহিদা ও বাস্তবতায় স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ। সেই হিসাবে আগেই এ পরিমার্জন আসা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র জানায়, নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী শুধু দশম শ্রেণির বইয়ের আলোকে এসএসসি পরীক্ষা হবে। আর এইচএসসিতে প্রথমে একাদশ শ্রেণির বিষয়গুলোর ওপরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে বছর শেষে। নম্বর শিক্ষা বোর্ড সংরক্ষণ করবে। এরপর দ্বাদশ শ্রেণির বিষয়ের ওপর ফের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। এ দুই শ্রেণির পরীক্ষার ফল যোগ করে এইচএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না। চতুর্থ থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিক মূল্যায়নে ৭০ শতাংশ নম্বর থাকবে। আর অষ্টম ও নবমে ৬০ শতাংশ, দশমে ৫০ শতাংশ ও এইচএসসিতে ৩০ শতাংশ নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নে আসবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী একই বই পড়বে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভাগ হয়ে পড়াশোনা করে। তবে নতুন শিক্ষাক্রমে বিভাগভিত্তিক ভাগ হবে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ভিশন ২০৪১ রূপকল্প, আওয়ামী লীগের ইশতেহার, জাতীয় শিক্ষানীতি ও জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বিবেচনায় নতুন শিক্ষাক্রম করা হচ্ছে। এর রূপরেখা প্রথমে তৈরি করা হয়। সেটি অনুমোদন পেলে শিক্ষাক্রম লেখার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে আগামী বছর চারটি শ্রেণিতে পাঠ্যবই যাবে। এগুলো তৈরির কাজ শেষ হবে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে বলে জানান তিনি।
Discussion about this post